Purulia Travel Tips

সবুজ উপত্যকার ছবি নিয়ে হইচই সমাজমাধ্যমে, বঙ্গেই সে স্থান, কী ভাবে যাবেন?

মোবাইল খুললেই সমাজমাধ্যমে ভেসে উঠছে ঘন সবুজ ঘাসের চাদরে আচ্ছাদিত উপত্যকা। তারই একপাশে এসে মিশেছে পাহাড়। সেই ছবি নিয়ে এখন কৌতূহল। কী ভাবে পৌঁছবেন সেই ঠিকানায়?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ১০:৫৩
Share:

ছবিটি টুরগা জলাধারের কাছে পাহাড়ের মাথায় রামমন্দির থেকে তোলা। ছবি: জনার্দন মাহাতো।

চোখ জুড়োনো বিস্তীর্ণ প্রান্তর। একপাশে ঢালু পাহাড় এসে মিশেছে। ঢেউখেলানো ঘন সবুজ সেই ভূমির উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গিয়েছে ক্ষীণ জলাধারা। এ ছবি দেখে সকলেরই প্রশ্ন, কোথায় আছে এমন ঠিকানা?

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে সমাজমাধ্যমে এমনই কিছু ছবি ঘোরাফেরা করছে। আর তা নিয়েই বাড়ছে কৌতূহল। এক ঝলকে দেখলে পাহাড়ি কোনও উপত্যকাই মনে হবে। যেখানে পাহাড়ের গায়ে রয়েছে পাইন, দেবদারুর মতো গাছ। তবে ভুল ভাঙে এই ছবির ক্যাপশন দেখলে। সেখানে লেখা, এটি পশ্চিমবঙ্গেই। পুরুলিয়ার টুরগা জলাধার।

টুরগা জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির সৌন্দর্য এতটাই, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ভ্রমণ সংক্রান্ত গ্রুপে শেয়ারও করছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই এই জায়গাকে ‘পশ্চিমবঙ্গের পহেলগাঁও’ বলে তুলনা করেছেন অনেকে। কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকার সঙ্গেও সৌন্দর্য বিচার চলছে। আর তার ফলেই সেখানে দিনে দিনে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। কৌতূহলী হচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

Advertisement

পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির কাছেই রয়েছে টুরগা জলাধার। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জলপ্রপাত। জলপ্রপাতের জলই এসে মেশে জলাধারে। জলপ্রপাতের নীচের অংশটিকে স্থানীয়রা বলেন ঘাঘকচা। এই বছর মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও, পুরোদস্তুর বর্ষা আসেনি। আর তারই ফলে শুকিয়ে যাওয়া টুরগা জলাধারের জল কমে উন্মোচিত হয়েছে প্রান্তর। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় তা হয়ে উঠেছে ঘন সবুজ। সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এই স্থানের একপাশে থাকা সুদীর্ঘ টিলা। পলাশ, কুসুম, শিমুল, মহুয়ার গাছ রয়েছে সেই টিলায়। দূর থেকে ছবি দেখে মনে হচ্ছে সেটা যেন পাইন-দেবদারু।

পাহাড়ের কোলে টুরগা জলাধার। গ্রীষ্মে জল কমতেই দৃশ্যমান সবুজ তৃণভূমি। ছবি: জনার্দন মাহাতো।

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বাঘমুন্ডি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বসন্ত, শীত নয়তো বর্ষাতেই ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে বেশি। কিন্তু বর্ষার ঠিক আগে যে এই স্থান এমন রূপে ধরা দেয়, তা জানা ছিল না বেশির ভাগ পর্যটকেরই।

বাঘমুন্ডি শহর থেকে অযোধ্য হিল রোড ধরলে টুরগা জলপ্রপাতের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের কাছাকাছি। বর্ষণমুখর দিনে তার রূপ হয় আরও সুন্দর। ভরা বর্ষায় জলপ্রপাত যেন গর্জে ওঠে। পাহাড়ের থেকে ধাপে ধাপে নেমে আসা জলপ্রপাতের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। তখন অবশ্য পাহাড়ের কোলে এমন ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ প্রান্তর দেখার সুযোগ থাকে না। এ বছরেও ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ার আগে, পুরুলিয়ার এমন রূপের সাক্ষী থাকা যাবে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তৃণ আচ্ছাদিত স্থান দেখে মনে হচ্ছে উপত্যকা। তার উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে গিয়ে জলপ্রপাতের ক্ষীণ জলধারা। ছবি: জনার্দন মাহাতো।

টুরগা জলপ্রপাতের বেশ কিছুটা দূরে জলাধার। জলপ্রপাত থেকে জলস্রোতের ক্ষীণতোয়া ধারা উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে আপন ছন্দে। রোদের তাপে শুকিয়েছে জলাধারও। কোথাও কোথাও জমে রয়েছে জল। তারই পাশে টিলার উপর গাছগাছালি। এই স্থানেই এখন স্থানীয় লোকজন, পর্যটকেরা ভিড় করছেন। কেউ বসে আড্ডা মারছেন, কেউ আবার ছবিও তুলছেন।

আর কোথায় যাবেন?

ঝালদা মহকুমার বাঘমুন্ডির আশপাশে ঘোরার জায়গা নেহাত কম নয়। টুরগা জলাধারের কাছাকাছি রয়েছে লহরিয়া জলাধার। দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। ২০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড় ঘেরা খয়রাবেড়া ড্যাম। বাঘমুন্ডি থেকে অযোধ্যা পাহাড়ও খুব কাছেই। টুরগা জলাধার অযোধ্যা পাহাড়তলিতেই অবস্থিত। তাই টুরগা জলাধার ঘুরতে এলে একই সঙ্গে ঘুরে নিতে পারেন ছৌ মুখোশের জন্য খ্যাত চড়িদা গ্রাম, আপার-লোয়ার ড্যাম,বামনি ফলস, মার্বেল লেক, মুরুগুমা জলাধার-সহ আরও অনেক জায়গা।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ট্রেনে টুরগা জলপ্রপাত যেতে হলে নামতে হবে বরাভূম স্টেশনে। সেখান থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন বাঘমুন্ডির দিকে অযোধ্যা মোড়ে। সেখান থেকে টোটো ধরে দেড় কিলোমিটার গেলেই পৌঁছবেন গন্তব্যে। আদ্রা-চক্রধরপুর এক্সপ্রেস রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে বরাভূম পৌঁছয় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে।

কোথায় থাকবেন?

টুরগা জলাধার থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই বিভিন্ন মানের বেসরকারি লজ রয়েছে। কেউ টুরগা জলাধার, জলপ্রপাত দেখে অযোধ্য পাহাড়ের মাথাতেও অর্থাৎ হিল টপে থাকতে পারেন। সেখানে সরকারি গেস্টহাউস রয়েছে। বেসরকারি একাধিক হোটেলও মিলবে থাকার জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement