—প্রতীকী ছবি।
জন্ম থেকে যে মায়ের কোলে বড় হয়েছে তার কাছ থেকে জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত পেল এক কিশোরী। ১৭ বছর ধরে যাঁকে মা বলে জেনে এল, তাঁর অন্য এক পরিচয় জানতে পেরে হতবাক হয়ে গেল সে। সমস্ত পারিবারিক বন্ধন নিমেষে শেষ হয়ে গেল তার। অন্য এক কিশোরীর সঙ্গে চেহারার অদ্ভুত মিল দেখে মাকে নানা প্রশ্ন করেছিল মিশে সলোমন নামে ওই কিশোরী। কিন্তু সদুত্তর পায়নি। বার বার তার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ায় সন্দেহের বশে ডিএনএ পরীক্ষা করায় সে। তাতেই প্রকাশ্যে আসে অভাবনীয় এক সত্যি। কিশোরীর জন্মরহস্যের উপর থেকে পর্দা সরে যায়। সে জানতে পারে, তাকে হাসপাতাল থেকে চুরি করে আনা হয়েছিল। দু’দশক ধরে সে অন্যের পরিবারে মানুষ হয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯৭ সালে সাউথ আফ্রিকার কেপটাউনের গ্রুট শুর হাসপাতাল থেকে জেফানি নার্স নামের তিন দিনের এক শিশুকন্যা চুরি হয়ে যায়। শিশুর মা সেলিন নার্স জানিয়েছিলেন, এক অপরিচিত ব্যক্তি তাঁর বিছানা থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশে খবর দেওয়া হলেও মেয়েটির আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার ১৭ বছর পর ২০১৫ সালে মিশে সলোমন নামে এক কিশোরী তার বোনের স্কুলে যায়। সেখানে তার এক বন্ধু জানায় মিশে দেখতে একেবারে তার যমজ বোনের মতো। এতে মিশে অবাক হয়। তার যে কোনও বোন থাকতে পারে এমন কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সে।
মিশের ওই বন্ধু তাকে এমন একটি ছবি দেখায় যেখানে তার বোন এবং মিশের শৈশবের ছবি হুবহু এক। ছবি দেখে মিশে হতবাক হয়ে যায়। বাড়ি এসে মিশে তার মা লাভোনা সলোমনকে প্রশ্ন করতে শুরু করে। প্রথম দিকে লাভোনা এই প্রশ্নগুলি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মিশে হাল ছাড়েনি।
এর পর সমাজকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিশে। তাঁরাই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। পরীক্ষার ফল আসার পর দেখা যায় মিশের সন্দেহই সত্যি। প্রমাণিত হয় যে ১৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শিশুকন্যা জেফানি নার্সই হল মিশে সলোমন। তাকে চুরি করে আনা হয়েছিল মায়ের কোল থেকে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদনে এই চমকপ্রদ কাহিনিটি উঠে এসেছে। এই ঘটনার পর লাভোনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মিশে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সাবালিকা হওয়ার পর তিনি তাঁর আসল পরিবারের কাছে ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি এতটাই বেদনাদায়ক ছিল যে আমি প্রথমে মেনে নিতে পারিনি। গোটা দুনিয়াটাই পাল্টে গিয়েছিল। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল আমাকে। জীবন যেন এক লহমায় সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল আমার।’’