কোলের সন্তানকে ছেড়ে হাসপাতালে যাননি, জ্বরে মৃত্যু হাবড়ার সায়নীর

শুক্রবার হাবড়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীনগর পূর্ব পালপাড়ায় সায়নীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ঝোপ-জঙ্গল আছে। মাটিতেও পাতা প্লাস্টিকে জল জমে আছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৯
Share:

সায়নী হালদার

দেড় বছরের কোলের সন্তানকে ছেড়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সমস্যা হতে পারে— এই যুক্তিতেই ছ’দিন জ্বর গায়ে বাড়িতেই ছিলেন সায়নী। শেষমেশ যখন ভর্তি হতেই হল হাসপাতালে, তখন আর চিকিৎসকদের করার বিশেষ কিছু নেই। মারা গিয়েছেন বছর উনিশের তরুণী সায়নী হালদার।

Advertisement

শুক্রবার হাবড়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীনগর পূর্ব পালপাড়ায় সায়নীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ঝোপ-জঙ্গল আছে। মাটিতেও পাতা প্লাস্টিকে জল জমে আছে।

স্থানীয় মানুষজন জানালেন, এলাকায় মশা মারা, তেল-চুন-ব্লিচিং ছড়ানোর কাজে কিছুটা গতি এসেছে গত কয়েক দিন ধরে।

Advertisement

তবে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গি-জ্বর নিয়ে সচেতনতার এখনও বেশ অভাব আছে বলে জানাচ্ছেন হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘জ্বর হলেও দেরিতে হাসপাতালে আসছেন অনেকে। হাসপাতালে অ্যালাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন। সকলের কাছে আবেদন, জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে আসুন।’’

তবে এখনও বহু মানুষ জ্বর হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে প্রথমে আসছেন না। রক্ত পরীক্ষা করাতে দেরি করছেন। হাতুড়ের উপর নির্ভর করছেন। শেষ মুহূর্তে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। হাবড়ার বিদায়ী পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ছ’দিন পরে সায়নীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনক।"

কী হয়েছিল সায়নীর?

মঙ্গলবার রাতে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে অবশ্য ডেঙ্গির উল্লেখ নেই। মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে, ‘সেপটিক শক।’ যদিও পরিবারের দাবি, সায়নী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন। অ্যালাইজা পরীক্ষায় তার প্রমাণও মিলেছিল।

চলতি মরসুমে হাবড়া-অশোকনগর এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গিতে ১৩ জনের প্রাণ গেল। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গি-আক্রান্ত ৯০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ১৬ জন শিশু।

সায়নী বিবাহিত। তাঁর দেড় বছরের শিশুকন্যা রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। বাপের বাড়িতেই থাকতেন। অশোকনগরের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর নতুন করে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। সায়নীর বাবা তপন বলেন, ‘‘মারা যাওয়ার দিন ছ’য়েক আগে জ্বর এসেছিল। স্থানীয় চিকিৎসক দেখানো হচ্ছিল। জ্বর ওঠানামা করছিল। মঙ্গলবার সকালে রক্ত পরীক্ষায় জানতে পারি, মেয়ের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তারপরেই হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার ছেলেরও জ্বর এসেছে।’’ হাবড়া হাসপাতাল থেকে সায়নীকে পাঠানো হয় আরজিকরে। কিন্তু ছ’দিন ধরে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা হল কেন? সায়নীর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আমরা প্রথমেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও রাজি হয়নি। বলেছিল, কোলের মেয়েটাকে ছেড়ে হাসপাতালে যাওয়া সমস্যার।’’

বৃহস্পতিবার হাবড়ার টুনিঘাটা এলাকার একটি মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যেরা কাশীপুর দক্ষিণ পাড়ায় গিয়েছিলেন মানুষকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে। সংগঠনের তরফে সঞ্জীব কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘মানুষ এখনও সচেতন হননি।’’ হাবড়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, বাড়ির উঠোনে জল জমে। উঠোনে টায়ার ফেলা তাতে জল জমে রয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ যত্রতত্র পড়ে আছে। তার মধ্যে জল জমে রয়েছে।

এরই মধ্যে মানুষকে সচেতন করতে স্কুলগুলি এগিয়ে আসছে। শুক্রবার দক্ষিণ নাংলা কেইউ ইনস্টিটিউটশনের পক্ষ থেকে পদযাত্রা করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য হাবড়ায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার জন্য পুরসভার ভূমিকাকেই দায়ী করছে। তাদের দাবি, নির্বাচিত পুরবোর্ড না থাকায় আগেভাগে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ না হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, শীত না পড়লে ডেঙ্গির প্রকোপ কমার সম্ভাবনা কম। তবে মানুষ সচেতন হলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন