গরমে নষ্ট হচ্ছিল ফসল। নদীর ভরসাতেই চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু নোনা জল ঢুকে পড়ায় সেই ভরসাটুকুও শেষ পর্যন্ত রাখতে পারেননি বনগাঁর কৃষকেরা। ফসল বাঁচাতে মরিয়া চাষিদের শেষ ভরসা ছিল বৃষ্টি। শনিবার সেই অপেক্ষার পালা শেষ হল। সকাল থেকেই আকাশে মেঘ দেখে চাষির মুখে হাসি ফুটতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়।
তীব্র দাবদাহের ফলে বনগাঁ মহকুমার পাট চাষিরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। জলের অভাবে পাট বাড়েনি। পাটের পাতা শুকিয়ে নুড়ে পড়েছে। গাছ মরেও যাচ্ছিল। লোকসানের কথা ভেবে চাষিদের নাওয়া-খাওয়া উবে গিয়েছিল। পাটের পাশাপাশি পটল, বেগুন, কলা, ঝিঙে— সবই রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছিল। জলের অভাবে বহু চাষি আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছিলেন না।
প্রকৃতি সদয় হওয়ায় এ বার সমস্যা মিটতে চলেছে বলে আশা করছেন চাষিরা। বনগাঁ ব্লকের মাধবপুর, মণিগ্রাম, শুকপুকুর, সভাইপুর গাঁড়াপোতা, মুড়িঘাটা, নকফুল অম্বরপুরের মতো এলাকার চাষিরা, যাঁরা ইছামতীর নোনা জল সেচের কাজে লাগাতে পারছিলেন না তারাও এ বার আশা করছেন, বৃষ্টি কয়েকটা দিন চললে সেচের সমস্যা কমবে। গাইঘাটা ব্লক ও বাগদা ব্লকের চাষিরাও খুশি বৃষ্টি নামায়। হাবরা অশোকনগরেও এ দিন বৃষ্টি হয়েছে।
জেলার অন্যতম অর্থকারি ফসল পাট। সেই পাট চাষই বৃষ্টির অভাবে শেষ হতে চলেছিল। চাষিদের কথায়, ‘‘বৃষ্টি যেন আমাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এল। টাকা খরচ করে শ্যালোর মাধ্যমে সেচে দেওয়া বেশির ভাগ চাষির পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না। তাই এই বৃষ্টিটা দরকার ছিল।’’ জেলা পাট উন্নয়ন আধিকারিক দুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বারাসতে দু’দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। আজ বনগাঁয় হয়েছে। এর ফলে পাট চাষিরা ভীষণ উপকৃত হবেন।’’ জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রাশাসন) অরূপ দাস জানিয়েছেন, ‘‘বৃষ্টিতে পাট অনেকটাই বাড়বে। রোগ-পোকার উপদ্রবও কমবে। জলের অভাবে যে সব চাষিরা আমন ধানের বীজতলা করতে পারছিলেন না তাঁরাও উপকৃত হবেন।’’
তবে শুধু চাষিই নয়, সমস্ত মানুষই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলেন। মরসুমের প্রথম বৃষ্টিতে বহু মানুষকে পথে নেমে ভিজতে দেখা যায়। সারা দিনই আকাশে মেঘ ছিল। দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। এক শিক্ষক জানালেন, ‘‘ছোট বেলায় প্রথম বৃষ্টি নামলে ভিজতে নেমে পড়তাম। এসব এখন আর নেই। দীর্ঘদিন পরে বহু মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখছি।’’