ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা কিছু অ্যাকাউন্টে
Coronavirus

সরকারি ত্রাণের খাবার অমিল, বলছেন অনেকেই

রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনাড়া, তালতলা গ্রামেও বহু মানুষ ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০২:০৭
Share:

ফাইল চিত্র।

হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের গাওয়ামারিতে নদী বাঁধের উপরে বেশ কিছু পরিবার আমপানের পর থেকে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের দাবি, আমপানের পরে ত্রিপল কেউ কেউ পেলেও প্রতিদিন সরকারি ভাবে খাবার দেওয়া হয় না। গাওয়ামারিতে গৌড়েশ্বর নদী বাঁধের উপরে আশ্রয় নেওয়া কৃষ্ণপদ মান্না বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের ছ’জন সদস্যের জন্য একদিন ১ কেজি চিঁড়ে ও ১০০ গ্রাম গুড়, আর একদিন ৫০০ গ্রাম চিঁড়ে ও ১০০ বাতাসা দেওয়া হয়েছিল। একটা ত্রিপল পেয়েছিলাম। এ ছাড়া, আর কোনও সরকারি ত্রাণ আজ পর্যন্ত পাইনি।’’ বেসরকারি ত্রাণই তঁদের ভরসা, জানালেন কৃষ্ণ।

Advertisement

তিনি আরও জানান, পাকা ঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর মা-বাবা যে মাটির ঘরে থাকতেন, সেই ঘর ভেঙে গিয়েছে। প্রায় ২০ কাঠা জমির পুকুরে প্রচুর মাছ ছিল। সে সব ভেসে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণও পাননি।

রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনাড়া, তালতলা গ্রামেও বহু মানুষ ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরাও জানান, সরকারি ভাবে ত্রাণ খুব কম পাচ্ছেন। বেসরকারি ত্রাণের জন্যই বেঁচে আছেন।

Advertisement

এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘আমরা নিরপেক্ষ ভাবে সকলের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সাহায্য করছি চাল-ডাল সহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে। তাই অনেকে বুঝতে পারছেন না, কোনটা সরকারি ত্রাণ।’’

অর্চনা আরও বলেন, ‘‘সোমবার পর্যন্ত হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ১৪৪২০ জনের ব্যাঙ্কে ঘরের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২০ হাজার টাকা চলে এসেছে। বাড়ির ক্ষতির সমস্ত তথ্য পাঠানো হয়েছে। ক্রমশ সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সর্বত্র জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। দলমত নির্বিশেষে দুর্গত মানুষের জন্য সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

ক্যানিং, বাসন্তী ও গোসাবা এলাকায় প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। ক্যানিং, গোসাবা ও বাসন্তী এই তিনটি ব্লক মিলিয়ে প্রথম দফায় প্রায় ২৪০০ মানুষের ক্ষতিপূরণের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, সরকারি ২০ হাজার করে টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যাঙ্কে আসতে শুরু করেছে।

অন্য দিকে, ত্রাণের ত্রিপলের দাবিতে কমবেশি সমস্ত এলাকাতেই মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ রয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্যানিং, বাসন্তী বিডিও অফিসে এ নিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন এলাকার মানুষজন।

ক্যানিংয়ের মধুখালি, দক্ষিণ বুদোখালি, খাসেরঘেরি, বাসন্তী থানার দুবাইপাড়া, রামচন্দ্রখালি, ভরতগড়, গোসাবার রাঙাবেলিয়া, পুঁইজালি, কুমিরমারি, কালিদাসপুর-সহ যে সমস্ত এলাকায় নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল, সেই সমস্ত এলাকায় সরকারি ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার, ত্রিপল একবার পৌঁছনো গিয়েছে। বেসরকারি বহু সংস্থাও এই সমস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। তবে গোসাবার বেশ কয়েকটি জায়গায় যোগাযোগের সমস্যার কারণে বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে এখনও পর্যন্ত দুর্গত মানুষজন সমস্যায় রয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে মথুরাপুর ২ ব্লকের রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েতের সামনে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কয়েক’শো বাসিন্দা। দুপুর আড়াইটে থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আন্দোলন চলে। পরে পুলিশ ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এখনও পর্যন্ত ত্রিপল, খাবার ও ঘর তৈরির টাকা তাঁরা পাননি। ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রেণুপদ হালদার বলেন, ‘‘ব্লক অফিস থেকে ত্রাণ এলেই আমরা পৌঁছে দেব।’’ ফলে উপভোক্তাদের এখনও পর্যন্ত দেওয়া যায়নি।’’ গাইঘাটা ব্লকের দুলাল বিশ্বাসের টিন, বেড়ার বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙেছে। ভিতটাই শুধু জেগে আছে। পঞ্চায়েত থেকে একটি ত্রিপল মিলছে। কিন্তু বাকি ঘর সারানোর মতো টাকা নেই হাতে। দুলাল তাঁর ভাগ্নের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বললেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের পরে কোনও ত্রাণ পাইনি। রেশন থেকে যা চাল-আটা পেয়েছিলাম, তা দিয়ে চলছে। ভাগ্নে সাহায্য করছে।’’

বনগাঁর কালুপুর পঞ্চায়েতের ধর্মপুর বিলিপাড়ার বাসিন্দা বিষ্ণু মাঝি। আমপানে বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে একটি ত্রিপল পেয়েছেন। সেই ত্রিপল এবং পাটকাঠি দিয়ে অন্যত্র মাথা গোঁজার আস্তানা তৈরি করেছেন। রেশন থেকে চাল-আটা পেয়েছেন বলে জানালেন। কিন্তু আলাদা করে কোনও ত্রাণ পাননি বলে জানালেন। দিনমজুরির কাজ করতেন। এখন সে সব বন্ধ। গ্রামে বনগাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেই খাবারই এখন খাচ্ছেন দুপুরে।

আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত বনগাঁ মহকুমার মানুষের ত্রিপল নিয়ে ক্ষোভ কমেছে। কমবেশি সকলেই প্রায় ত্রিপল পেয়েছেন। কিন্তু একটি ত্রিপল দিয়ে গোটা বাড়ি মেরামত করে ছাউনি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রেশন থেকে চাল-আটা মিললেও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর অভাব রয়েছে বলে জানালেন অনেকেই। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, কেউ পঞ্চায়েতে আবেদন করলে ৫ কেজি চাল জিআর হিসাবে দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement