হাবড়া হাসপাতালে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
হাবড়ায় বাড়ছে জ্বর-ডেঙ্গি। প্রতি দিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯০ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বহু। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা মানছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। পরিস্থিতির মোকাবিলায় পদক্ষেপ শুরু করল জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
হাসপাতালের অবস্থা এমনই, একই শয্যায় তিন-চার জন করে রোগী শুয়ে। মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা করানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে মঙ্গলবার হাসপাতালে আসেন জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন। জেলাশাসক পরে বলেন, ‘‘হাবড়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেই আমরা এসেছি। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। সেই মতো চিকিৎসা করা হচ্ছে। সে সব এলাকা থেকে জ্বরের রোগী বেশি আসছেন, সেখানে আরও বেশি করে সাফাই অভিযান ও মশা মারার কাজ করা হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া হাসপাতালে আরও ৬ জন বাড়তি চিকিৎসক ও নার্স পাঠানো হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, ‘‘পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের রোগীর খোঁজ নিতে। বাড়ি বাড়ি ডেঙ্গি সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করতেও বলা হয়েছে।’’ মন্ত্রীর দাবি, মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেকেই জ্বর হওয়ার ৭-৮ দিন পরে হাসপাতালে আসছেন। এটা করা যাবে না।
জ্বর-ডেঙ্গির মোকাবিলায় হাবড়া পুরসভার তরফে হাসপাতাল চত্বরে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রোগীরা এখান থেকে সব ধরনের সাহায্য পেতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। হাবড়া হাসপাতাল থেকে কোনও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে স্থানান্তরিত করা হলে সহায়তা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই হাবড়া থানা এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারের দাবি, সকলেরই অ্যালাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। মৃত্যু শংসাপত্রে অবশ্য ডেঙ্গির কথা উল্লেখ নেই। ২০১৭ সালে হাবড়ায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। সরকারি হিসাবে ২০ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এ বার ফের জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা আতঙ্কিত। অনেকেরই অভিযোগ, প্রশাসক বসিয়ে চলা পুরসভা মশা মারা, নিকাশি নালা সাফাইয়ে দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারছে না। নজরদারির অভাব রয়েছে। সেই ফাঁকে জাঁকিয়ে বসেছে জ্বর-ডেঙ্গি। আগে ভাগে কেন পদক্ষেপ করা হল না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
প্রশাসনের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না। নিয়মিত মশা মারা থেকে নালা সাফাই অভিযান চলছে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, হাবড়া হাসপাতালে যাঁরা জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে আসছেন, সকলে হাবড়ার বাসিন্দা নন। গাইঘাটা, অশোকনগর, হরিণঘাটা থেকেও আসেন অনেকে।