football

Sundarban: পরিচারিকার কাজ ছেড়ে ফুটবল খেলছে মল্লিকা, সুজাতারা

আজ প্রবাসী বাঙালি হীরেন সিংহরায়ের উদ্যোগে সুন্দরবনের বহু ছেলেমেয়ে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে, খেলাধুলো শিখছে, স্কুলছুটেরা ফিরে আসছে ক্লাসে।  

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

বাসন্তী  শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৯
Share:

বদল: মাঠে নামায় এসেছে জীবনেও পরিবর্তন। নিজস্ব চিত্র

লন্ডন থেকে সুন্দরবনের ভৌগোলিক দূরত্ব কয়েক হাজার কিলোমিটার। কিন্তু এই ব্যবধান বাধা হয়নি তাঁর কর্মকাণ্ডে। আজ প্রবাসী বাঙালি হীরেন সিংহরায়ের উদ্যোগে সুন্দরবনের বহু ছেলেমেয়ে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে, খেলাধুলো শিখছে, স্কুলছুটেরা ফিরে আসছে ক্লাসে।

Advertisement

জল-জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষেরা বহু সমস্যায় জর্জরিত। জীবনধারণের জন্য নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। এখানকার বেশিরভাগ পরিবারই নিম্নবিত্ত। ছেলেমেয়েরা অনেকেই সার্বিক শিক্ষা, খেলাধুলোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। পেটের টানে জীবিকার খোঁজে অনেকে বেরিয়ে পড়ে কৈশোর পেরোনোর আগেই। নারী পাচারের মতো ভয়ঙ্কর সমস্যা তো রয়েইছে।

বছর সাতেক আগে লন্ডন থেকে সপরিবার সুন্দরবন ভ্রমণে এসে এখানকার অপুষ্ট শিশুদের দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল প্রবাসী বাঙালি হীরেনের। সেই থেকেই সুন্দরবনের শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু করতে উদ্যোগী হন বছর তিয়াত্তরের এই প্রবাসী বাঙালি।

Advertisement

সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন হীরেন। সুন্দরবনের কলাহাজরা, সোনাখালি, রানিগড়, শিবগঞ্জ, কুমিরমারি-সহ আশপাশের গ্রামগুলিতে যে শুধু পুষ্টির অভাব রয়েছে তা নয়, স্কুলছুট থেকে শুরু করে বাল্যবিবাহের মতো আরও নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার মেয়েরা। দিনের পর দিন কাজের লোভে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিতে গিয়ে পাচার হয়ে যায় বহু কিশোরী। ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকে এই সমস্যা আরও বেড়েছে।

নারী পাচার রুখতে মেয়েদের পড়াশোনার উপরে জোর দেন হীরেন। তাঁদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ফুটবল অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তাঁর চেষ্টায় স্কুলছুট বহু ছেলেমেয়ে ফের ক্লাসে ফিরছে। মেয়েদের গৃহশিক্ষক থেকে শুরু করে খেলাধুলার সামগ্রী, ফুটবল কোচিংয়ের ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাবার, পোশাক, জুতো ইত্যাদি যাবতীয় খরচ নিজের কাঁধে তুলে নেন হীরেন। মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় পরিচারিকার কাজে, ব্যাগের কারখানায় কাজে গিয়েছিল মল্লিকা, সুজাতা, আমিনারা। তারা এখন ফুটবল খেলা আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। লন্ডন থেকে হীরেন মাঝে মধ্যেই আসেন সমস্ত ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখতে। করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে সমস্যায় পড়েছিল পরিবারগুলি। অনেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। রোজগার প্রায় বন্ধের মুখে পড়েছিল। টানা লকডাউনের সময়ে হীরেন তাঁর স্ত্রী রোদিকার উদ্যোগে গ্রামে দিনের পর দিন কমিউনিটি কিচেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ২৫০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেন তাঁরা। ক্ষুদ্র ব্যবসায় এই পরিবারগুলিকে উৎসাহ দিতে গ্রামেই স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি ও ঢেঁকিছাঁটা চালের ব্যবসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে শর্ত ছিল, কোনও ভাবেই মেয়েদের পড়াশোনা ও ফুটবল খেলা বন্ধ করা যাবে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে সকলে। সুন্দরবনের মেয়েরাও আবার মন দিয়েছে ফুটবল অনুশীলনে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের মায়া ফুটবল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া মেয়েরা কলকাতার বড় বড় ক্লাবের ট্রায়ালে যোগদান করেছে। বাসন্তী-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবল প্রতিযোগিতায় যোগদান করে সেরার শিরোপা পেয়েছে। আপাতত ২৫ জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে হীরেনের উদ্যোগে। আগামী দিনে সুন্দরবনের অন্যান্য গ্রামের অভাবী, ইচ্ছুক কিশোরীদেরও ফুটবলে উৎসাহ দেওয়া হবে বলে জানান এই প্রবাসী বাঙালি। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছোট মেয়ে মায়ার উদ্যোগেই ফুটবল কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুন্দরবনের যেখানে পাচারের সমস্যা খুব বেশি, সেখানকার মেয়েদেরই মূলত ফুটবল মাঠে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। ফুটবল একদিকে যেমন শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তেমনই মনের জোর বাড়ায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাই না। এই এলাকার মানুষকে ভালবেসে পারিবারিক উদ্যোগেই কাজ করি।’’ সিংহরায় পরিবারের উদ্যোগে নিজেদের আত্মবিশ্বাস, মনের জোর ফিরে পেয়েছে কণিকা, অনিমা, ফতেমারা। কণিকার তারা জানায়, সিংহরায় পরিবারকে পাশে পাওয়ায় জীবনটাই বদলে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন