বাবা-ছেলে: দেখা হল ১৮ মাস পরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
এ ভাবেও ফিরে যাওয়া যায়।
চেন্নাই থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে কোরাট্টুর গ্রামের বাসিন্দা টি ধনশেখরন প্রায় আঠারো মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতের দরিদ্র পরিবারের ছেলে ধনশেখরনের বাড়িতে টিভি নেই। ছেলের খোঁজে রেডিওতেই কান পাততেন তাঁর বাবা-মা। দিন দিন আশা কমে আসছিল। কিন্তু হঠাৎই সেই রেডিও সেটের মাধ্যমেই যে তাঁরা কোরাট্টুর থেকে প্রায় ১৬৮৪ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবার থেকে ছেলের খোঁজ মিলবে সেটা হয়তো তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি।
কী ভাবে ডায়মন্ড হারবারে এলেন তিনি? ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ বছর পঁচিশের এক আহত যুবককে প্রায় নগ্ন অবস্থায় সেখানে ভর্তি করে যান একজন। তখন তাঁর মাথা ও চিবুকে ক্ষত ছিল। স্বরনালীতেও সমস্যা ছিল। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে তিনি কথা বলা শুরু করার পরে বোঝা যায় তিনি তামিলভাষী।
ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের সহকারি সুপার সুপ্রিম সাহা বলেন, ‘‘ওর ভাষা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটি মানসিক অবসাদগ্রস্থ থাকায় আকারে ইঙ্গিতেও বোঝানোর সমস্যা হচ্ছিল।’’ এর পর সুপ্রিমবাবু বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গেই ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশনাগ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। অম্বরীশবাবু যোগাযোগ করেন তামিলনাড়ুর হ্যাম রেডিও’র সঙ্গে। চেন্নাইয়ের হ্যাম সদস্য গোপীনাথ তামিলভাষী। অম্বরীশবাবু ‘মোবাইল কনফারেন্স’ করে গোপীনাথের সঙ্গে ধনশেখরনের কথা বলান। তার পর ধনশেখরনের বাড়ির ঠিকানা বের করা হয়। জানা যায়, ধনশেখরনের বাবা থিরুনাভুকারাসু ভাগ চাষি। নিজের ঘটি-বাটি বিক্রি করে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন। কিন্তু মনের মতো চাকরি না পেয়ে অবসাদ গ্রাস করে ধনশেখরনকে। তার পরেই তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। একটি বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে অন্য বেতারযন্ত্রে কথা বলা বা তথ্য নেওয়া-দেওয়াই হ্যাম রেডিও অপারেটরদের কাজ। বার্তা বিনিময় হয় ত়ড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে। বুধবার সেভাবেই হ্যাম রেডিওয়ের মাধ্যমে ধনশেখরনের সঙ্গে তাঁর বাবার কথা হয়। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারে চলে আসেন ধনশেখরনের বাবা। হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন থিরুনাভুকারাসু। ঘটনাচক্রে শুক্রবার ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ বারের বিষয় ছিল অবসাদ। সেই দিনেই অবসাদ কাটিয়ে বাড়ি ফিরলেন ধনশেখরন। অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘কাজের সন্ধানেই বেরিয়েছিল ধনশেখরন। পথে তাঁকে ঠকিয়ে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয়। এখনও এটুকুই জানতে পারা গিয়েছে।’’ ফেরার আগে হ্যাম রেডিও সদস্যদের ধন্যবাদ জানান ধনশেখরন ও তাঁর বাবা।