নম্বরহীন: চলছে বেআইনি গাড়ি। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
মাটি বোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা মারে সাইকেল আরোহীকে। গাড়িটির নম্বর দেখার জন্য এলাকার লোকজন তার পিছু নেয়। কিন্তু কোথায় কী। দেখা গেল ওই ট্রাকের কোনও নম্বরপ্লেটই নেই। উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের ঘটনা।
শাসন-খড়িবাড়ি-সহ বারাসত ২ নম্বর ও দেগঙ্গা ব্লকের কৃষিজমি ও ভেড়ি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হয় বলে অভিযোগ। সেই মাটি ডাম্পার, ট্রাকে করে পাচার হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। নীচু জমি ভরাটের কাজেও ওই মাটি ব্যবহার হয় বলে অভিযোগ। এই বোআইনি কাজের গাড়িগুলিরই নম্বরপ্লেট থাকে না বলে জানান স্থানীয়রা। নম্বর ছাড়াই সামনে ফাঁকা বোর্ড ঝুলিয়ে যাতায়াত করছে ট্রাক। অনেক ট্রাকের আবার তাও নেই। ফলে দুর্ঘটনার পরে তাদের চিহ্নিত করতে সমস্যা পড়ে পুলিশ।
ওই সব এলাকায় মাটি কাটার কাজ বন্ধ করার জন্য মঙ্গল ও বুধবার হানা দেয় উত্তর ২৪ পরগনা ভূমি ও ভুমি সংস্কার দফতর এবং পুলিশের কর্তারা। আটক করা হয় অনেকগুলি মাটি কাটার যন্ত্র ও মাটি বহনকারী ট্রাকও। সে সময়ে নম্বরপ্লেট ছাড়া গাড়ির বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদেরও।
বুধবার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের আধিকারিকেরা ওই সব এলাকায় তদন্তে গিয়ে নম্বরপ্লেটহীন গাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় পড়া মাটি বহনকারী গাড়ি চিহ্নিত করে ধরা হচ্ছে। নম্বরপ্লেটহীন গাড়ির বিষয়েও নজরদারি চলছে।’’
এ দিকে বেআইনি মাটি বহনকারী ট্রাকের ধাক্কায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত রবিবার সকালে বাদুড়িয়ার বিনেরআটি গ্রামের বাসিন্দা মরিয়াম বিবি (৩৭) ছেলের বাইকে চড়ে ফিরছিলেন। দেগঙ্গার কলসুরে মাটির গাড়ির ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা গাড়িটি ভাঙচুর করে রাস্তার পাশে উল্টিয়ে দেয়। তার ঠিক আগের দিন, শনিবার মাটি বহনকারী আরেকটি ট্রাকের ধাক্কায় এক স্কুল ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মধ্যমগ্রাম থানার রোহন্ডা। পুলিশের সামনেই ট্রাকটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুনও ধরিয়ে দেয় জনতা।
শাসন-সহ বারাসত ২ নম্বর ও দেগঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কেটে দ্রুতগতিতে যাতায়াত করে এই শক্তিমান ট্রাকগুলি। প্রায়শই লেগে থাকে দুর্ঘটনা। এই গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু এবং পঙ্গু হয়ে পড়ে থাকার উদাহারণ অসংখ্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক একটি ঘটনার পরে পুলিশি অভিযানের পরে কিছুদিন চুপ থাকে। ফের শুরু হয়ে যায় মাটির গাড়ির দাপট। সবার চোখের সামনে পেল্লায় সাইজের মাটি কাটার যন্ত্র এবং শতাধিক ডাম্পার, শক্তিমান, ট্রাক যাতায়াত করে এই এলাকা দিয়ে। তাদের ‘ক্ষমতা’ এতটাই যে নম্বরপ্লেট ছাড়া গাড়ি চালাতেও পিছুপা হয় না তারা। এই গাড়িগুলি বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে। প্রচন্ড গতি হয় এদের।
পুলিশ জানিয়েছে, কোনও গাড়িই পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশেন নম্বরপ্লেট না লাগিয়ে চলাচল করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে গাড়িটি শুধু বেআইনিই নয়, তার চালক, মালিক সবাই গ্রেফতারও হতে পারে। এ বিষয়ে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘শক্তিমান ট্রাকগুলি নম্বর, রোড ট্যাক্স দিতে আসেই না। পুলিশ ধরলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়াও আমাদের দফতর থেকে ওদের বিরুদ্ধে কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযান শুরু করা হবে।’’