প্রতীকী ছবি
পুরো মহকুমায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। তাঁদের চিকিৎসাও চলছে। অনেকে সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কারও চিকিৎসা মহকুমা এলাকায় হয়নি। বাড়িতে থেকে যাঁরা চিকিৎসা করিয়েছেন, তাঁরা ছাড়া সকলেরই চিকিৎসা হয়েছে হয় বারাসত, না হয় ব্যারাকপুর বা কলকাতার হাসপাতালে।
কারণ পুরো মহকুমাতেই কোনও কোভিড হাসপাতাল নেই। সম্প্রতি একটি হাসপাতাল শুরুর ঘোষণা হলেও, তা হচ্ছে অশোকনগরে। সেটি বারাসত মহকুমায়। এলাকায় কোভিড হাসপাতালের দাবি রোজই জোরাল হচ্ছে। যেহেতু হাসপাতাল নেই, তার ফলে পরিকাঠামোর প্রশ্নই উঠছেই না। আছে বলতে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স। সেগুলি শুধুমাত্র কোভিড রোগীর জন্যই ব্যবহৃত হয়। তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে অভিযোগ আছে। করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা-নামানোর কর্মীর অভাব রয়েছে। দিন কয়েক আগে এমনই এক বৃদ্ধকে ব্যারাকপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। সেই রোগীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক এখনও থামেনি।
করোনা উপসর্গ নিয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের দেহ সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামোও নেই। কোভিড হাসপাতাল দূরের কথা বনগাঁ শহরে কোনও সেফ হোমও নেই। বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বরের রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ফিভার ওয়ার্ড করা হয়েছে। তবে এখানে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০১ জন। মহকুমার জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লক্ষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসার জায়গা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল বা বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এই হাসপাতালের একাংশকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার দাবিতে শুক্রবার বাম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতোর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বনগাঁর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য পত্রিকা এবং মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও একই দাবি তোলা হয়েছে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ৫টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে তা এইচডিইউ বিভাগে ভর্তি রোগীদের জন্য। যাঁদের উপসর্গ থাকছে না, তাঁদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসার উপরে জোর দেওয়া। বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেউ রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে, দুর্ভোগের শেষ থাকে না। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল এবং চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল ও বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে লালারস সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই লালারস স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, নাইসেড বা আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রিপোর্ট আসতে দেরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসার আগেই লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ। সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে তা থেকে।
তবে বৃহস্পতিবার থেকে মহকুমা হাসপাতালে রাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। দৈনিক ৫০ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, রোজই লালারস সংগ্রহ করে কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)