অজ্ঞান করে ডাকাতি স্বরূপনগরের গ্রামে

পঁচাশি বছরের বৃদ্ধার গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না লুঠ করে পাঠাল দুষ্কৃতীরা। ‘অপারেশন’ চালানোর সময়ে বাড়ির অন্যদের ওষুধ স্প্রে করে অজ্ঞান করে ফেলেছিল তারা। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগর থানার নির্মাণ গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় সেনাকর্মী কৃষ্ণগোপাল রায়ের বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share:

লুঠপাটের পরে ঘরের দশা। নিজস্ব চিত্র।

পঁচাশি বছরের বৃদ্ধার গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না লুঠ করে পাঠাল দুষ্কৃতীরা। ‘অপারেশন’ চালানোর সময়ে বাড়ির অন্যদের ওষুধ স্প্রে করে অজ্ঞান করে ফেলেছিল তারা।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগর থানার নির্মাণ গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় সেনাকর্মী কৃষ্ণগোপাল রায়ের বাড়িতে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই সেনাকর্মীর স্ত্রী বাসবীদেবী এবং বড় ছেলে প্রদীপ্তকে রাতেই স্থানীয় ডাকবাংলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম নির্মাণ। অবাধে গরু পাচার চলে এই এলাকা দিয়ে। বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা নানা সময়ে এসে দুষ্কর্ম করে ও পারে গা ঢাকা দেয় বলে অভিযোগ। মহিলাদের উপরে অত্যাচারের মাত্রাও বেড়েছে ইদানীং।

Advertisement

কী হয়েছিল শনিবার রাতে?

রাত তখন প্রায় ১২টা। বাড়ির দোতলার ঘরে পড়ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র প্রদীপ্ত। হঠাৎ বাইরে থেকে জানালার শিক বাঁকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে দেখে চিৎকার করে ওঠে সে। দুষ্কৃতীরা তার মুখের সামনে কিছু একটা স্প্রে করে। মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ওই কিশোর। তত ক্ষণে জানলার শিক ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। প্রদীপ্তর ঘরে রাখা আলমারি এবং বাক্স ভেঙে লুঠপাট চালায়। এরপরে তারা সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে বাসবীদেবীর ঘরে ঢোকে। সেখানেও ওষুধ স্প্রে করে লুঠপাট করে। পরে তারা হানা দেয় কৃষ্ণগোপালবাবুর মা সাবিত্রীর ঘরে।

সাবিত্রীদেবী বলেন, “প্রথমটায় মনে হয়েছিল নাতিরা ঘরে ঢুকে টর্চ জ্বেলেছে। সাড়া দিতেই রুদ্রমূর্তি ধরে ওরা। একজন আমার মাথায় ভোজালি এবং গলায় গামছা ধরে বলে, চিৎকার করলে খুন করে ফেলবে।” ভয়ে বৃদ্ধা টুঁ শব্দটি করেননি। ঘরের আলমারি ভেঙে নগদ টাকা, অলঙ্কার-সহ নানা জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। বৃদ্ধা তখন ডাকাত পড়েছে বলে চিৎকার চেঁচামেচি জোড়েন। আশপাশের লোকজনের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু দরজা খুলে বেরোতে গিয়ে তাঁরা বোঝেন, বাইরে থেকে শিকল তোলা। বাড়ির অন্য আত্মীয়দের ঘরের বাইরেও শিকল তোলা ছিল।

কৃষ্ণগোপালবাবুর আত্মীয়া নীলিমা রায় বলেন, “ঠাকুমা (সাবিত্রীদেবী) এসে আমাদের দরজার শিকল খোলেন। দোতলা এবং একতলার ঘরে বাসবী এবং প্রদীপ্ত অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল।” ওই রাতেই মা-ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ দু’বার তদন্তে আসে। রায় পরিবারের জামাই সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “সম্ভবত ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে অজ্ঞার করেছিল দুষ্কৃতীরা। বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না, কয়েক হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে।” কৃষ্ণগোপালবাবু বর্তমানে আন্দামানে কর্মরত। তাঁকে খবর পাঠানো হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জন মণ্ডল, উত্তম পাল বলেন, “গত কয়েক মাসের মধ্যে স্বরূপনগরের নির্মাণ গ্রামে ছ’জনের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ভাদুড়িয়া, খর্দ্দরসিংহ এবং বাংলানি গ্রামে ডাকাতির ঘটনার পরেও দুষ্কৃতীরা ধরে পড়ছে না। আমাদের অনুমান, বাংলাদেশ থেকে এ পারে গরু নিতে আসা দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করে পালাচ্ছে” ইতিমধ্যেই সীমান্তের গ্রামের মানুষ নিরাপত্তার দাবিতে পুলিশের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। দুষ্কৃতী ধরা না পড়লে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement