Congress-TMC

বাংলায় বিরোধী জোট হচ্ছে না কেন? ‘কাঁটা’ কোথায়? কংগ্রেসের প্রলেপ-চেষ্টার পর জানিয়ে দিল তৃণমূল

সর্বভারতীয় কংগ্রেস যখন তৃণমূলকে ‘নমনীয়’ হয়ে বার্তা দিচ্ছে, তখন সর্বভারতীয় তৃণমূল জানিয়ে দিল, রাজ্য কংগ্রেসের কার ভূমিকা বাংলায় জোটের পথে এক এবং একমাত্র বাধা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। —ফাইল চিত্র।

বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট সম্ভাবনায় বুধবারই ‘ইতি’ টেনে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দফায় তৃণমূলের উদ্দেশে ‘নমনীয়’ হওয়ার বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস। দলের নেতা তথা মুখপাত্র নেতা জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, মমতাকে ছাড়া ‘ইন্ডিয়া’ ভাবা যায় না। তৃণমূল হল বিরোধী জোটের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু বৃহস্পতিবার সর্বভারতীয় তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বাংলায় জোটের পথে ‘কাঁটা’ কে?

Advertisement

ডেরেকের বক্তব্য— অধীর চৌধুরী।

ডেরেক বলেন, ‘‘বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধীর সংখ্যা দুই। এক বিজেপি, দুই অধীর চৌধুরী। বাংলায় জোট কার্যকর না হওয়ার প্রথম কারণ অধীর, দ্বিতীয় কারণ অধীর, তৃতীয় কারণও অধীরই।’’ শুধু তা-ই নয়। ডেরেক আরও বলেন, ‘‘বিজেপি এবং অধীরের ভাষার মধ্যে কোনও ফারাক নেই। তাঁরা এক সুরে কথা বলেন।’’ বিরোধী শিবিরের একাংশ মনে করছে, ডেরেক বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলায় বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষেরা যে ভাষায় মমতাকে আক্রমণ করেন, অধীরও সেই একই ভাষায় কথা বলেন।

Advertisement

যদিও এ বিষয়ে অধীরের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। গত কয়েক দিন ধরেই জোট নিয়ে অধীর তেমন কোনও মন্তব্য করছেন না। তৃণমূলের মন্তব্য নিয়েও কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। বরং সর্বভারতীয় নেতাদের কোর্টে বল ঠেলে দিচ্ছেন। তবে অধীর-ঘনিষ্ঠেরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, ‘‘দাদা যা বলার বলে দিয়েছেন। তাতে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।’’ যেমন অধীর-ঘনিষ্ঠ মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘অপারেশন সাকসেসফুল।’’

বুধবারই অল্প কথায় বাংলায় জোটের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন মমতা। পূর্ব বর্ধমান যাওয়ার আগে কংগ্রেস নিয়ে প্রশ্ন করায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমার কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার প্রস্তাব প্রথম দিনেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন থেকেই আমরা একলা লড়ব বলে ঠিক করে নিয়েছিলাম।’’ রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে মমতার আলোচনা হচ্ছে। মমতা সেই বক্তব্যকেও উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি। অ্যাবসোলিউটলি মিথ্যা কথা!’’ বুধবার মমতা আরও বলেছিলেন, ‘‘এই যে আমাদের রাজ্যে আসছে (রাহুলের যাত্রা), আমাকে তো এক বারও বলেনি! সৌজন্য দেখিয়েও তো বলা উচিত ছিল!’’ মমতার কথায়, ‘‘আমরা আঞ্চলিক দলগুলো ভোটের পরে কী সিদ্ধান্ত নেব, তা ভোটের পরেই ঠিক করব। আমরা বিজেপিকে সরাতে চাই। আমি তো ওদের (কংগ্রেসকে) বলেছিলাম ৩০০ আসনে লড়তে। বাকিটা আমরা সকলে মিলে লড়তাম।’’ মমতার ওই মন্তব্যের পর জোটের শরিকদের অনেকেই কংগ্রেসের বিরোধিতায় মুখ খুলতে শুরু করে। যেমন আপ জানিয়ে দেয়, তারা কংগ্রেসের সঙ্গে পঞ্জাবে কোনও সমঝোতায় যাবে না।

মঙ্গলবারেই অসম থেকে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘আমাদের (কংগ্রেস-তৃণমূলের) যে আসন বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে, তা চলছে। তার ফলাফল আসবে। ওই বিষয়ে আমি এখানে কোনও মন্তব্য করব না।’’ কিন্তু প্রায় একনিশ্বাসে রাহুল এ-ও বলেছিলেন, ‘‘মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ও দলের সম্পর্ক (রিস্তা) খুবই ভাল। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রকম (বিতর্ক) হয়। আমাদের কেউ কিছু বলে দেন। ওঁদের কেউ কিছু বলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সব এতে (আসন বোঝাপড়ায়) বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’

তার পরেই তৃণমূল বাংলায় জোটের পথে অধীরকে একমাত্র ‘কাঁটা’ বলে উল্লেখ করল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সম্পর্কে তৃণমূলের ওই মন্তব্য কংগ্রেস কী ভাবে নেয়, তা-ই এখন দেখার। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে চলেছে, তাতে বাংলায় জোট সম্ভাবনা কার্যত শেষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন