বিধানসভায় শপথ নিচ্ছেন কালীগঞ্জের নবনির্বাচিত বিধায়ক আলিফা আহমেদ। — নিজস্ব চিত্র।
বিধায়ক পদে শপথ নিলেন নদিয়ার কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। বুধবার বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। বিধায়ক পদে শপথগ্রহণের পর আলিফা জানিয়েছেন, এ বার তিনি কালীগঞ্জে নিহত কিশোরী তমন্না খাতুনের বাড়িতে যাবেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। এত দিন কেন যাননি? সেই প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি আলিফা। জানিয়েছেন, কবে তমন্নার বাড়িতে তিনি যাবেন, তা সময় এলেই জানা যাবে।
গত ২৩ জুন কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের গণনা চলাকালীন বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ১০ বছরের কিশোরী তমন্নার। সে স্থানীয় একটি সিপিএম সমর্থক পরিবারের কন্যা ছিল। ভোটের গণনা শেষ হওয়ার আগেই কালীগঞ্জে আলিফার জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তৃণমূল বার করেছিল বিজয়মিছিল। অভিযোগ, সেখান থেকেই সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। যার আঘাতে মৃত্যু হয় কিশোরীর। এই ঘটনার পর তমন্নার মা প্রশ্ন তুলেছিলেন, হবু বিধায়ক কেন এক বারও তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন না? রাজনৈতিক মহলেও আলিফার না-যাওয়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কালীগঞ্জের নবনির্বাচিত বিধায়ক।
তমন্নার মৃত্যুর খবর পেয়ে সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেছিলেন আলিফা। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। বুধবার বিধানসভায় বিধায়ক হিসাবে শপথ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বার আমি ওই নিহত কিশোরীর বাড়িতে যাব।’’ এত দিন কেন যাননি? আলিফা তার উত্তর দিতে চাননি। উল্টে বলেন, ‘‘কবে ওই কিশোরীর বাড়িতে আমি যাব, তা সময় এলেই জানতে পারবেন। আমি এখনই কিছু বলব না।’’
আলিফা এখনও যাননি। কিন্তু কালীগঞ্জের নিহত কিশোরীর বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছেন তৃণমূলের ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি তমন্নার মাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। তা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তাঁর দেওয়া টাকার খাম নেননি তমন্নার মা। বিতর্কের মুখে হুমায়ুন জানিয়েছিলেন, তিনি একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের তরফে ওই অর্থসাহায্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু এই পদক্ষেপের জন্য দলের অন্দরেও তাঁকে রোষের মুখে পড়তে হয়। দলকে না-জানিয়ে আগ বাড়িয়ে তমন্নার বাড়িতে যাওয়া এবং অর্থসাহায্য করতে চাওয়ার জন্য হুমায়ুনকে শো কজ় করে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে আলিফা ওই বাড়িতে গিয়ে তমন্নার মাকে কী বলেন, সে দিকে নজর থাকবে।
প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর কেন্দ্রে তাঁর কন্যা তথ্য প্রযুক্তিকর্মী আলিফাকে প্রার্থী করে তৃণমূল। বাবার ব্যবধান ছাপিয়ে উপনির্বাচনে ৪৯ হাজার ভোটে জিতেছেন আলিফা। কিন্তু সেই জয়ের উৎসবে ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে তমন্নার মৃত্যু। এই ঘটনায় একাধিক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মূল অভিযুক্তও। কিন্তু তমন্নার মৃত্যুতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদল যে অস্বস্তির মুখে পড়েছে, তা কাটানো বিধায়ক হিসাবে প্রথম পরীক্ষা হতে চলেছে আলিফার, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।