TMC

বাঁশের পাঁচিলে নীল-সাদা কাপড়ে ঢাকা হল আবর্জনার স্তূপ

ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর উল্টো দিকে জেলা কৃষি খামারের ভিতরে মঙ্গলবার দুপুরে ‘মাটি মেলা’র উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:৩৭
Share:

ঢাকা পড়েছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড। নিজস্ব চিত্র।

‘মাটি মেলা’র উদ্বোধনে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। থাকবেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলারা। মেলাস্থলের অদূরে বর্ধমান ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর আবর্জনা স্তূপের দিকে তাঁদের নজর গেলে, ‘অস্বস্তি’তে পড়তে হতে পারে জেলা প্রশাসনকে। তাই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর পাঁচিলের উপরে তৈরি করা হয়েছিল ১৪ ফুট উঁচু বাঁশের ব্যারিকেড। তাতে নীল-সাদা কাপড় আটকে ঢাকা হল আবর্জনার স্তূপ। কিন্তু দৃশ্যদূষণ এড়ানো গেলেও দুর্গন্ধ ঢাকা যায়নি বলেই দাবি এলাকাবাসীর একাংশের।

Advertisement

ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর উল্টো দিকে জেলা কৃষি খামারের ভিতরে মঙ্গলবার দুপুরে ‘মাটি মেলা’র উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিব ও আধিকারিকরা। মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে এলেও, আধিকারিকেরা মেলাস্থলে পোঁছেছিলেন ডাম্পিং গ্রাউন্ড সংলগ্ন রাস্তা দিয়েই।

জেলা প্রশাসন ও বর্ধমান পুরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ঠিক ছিল প্লাস্টিক দিয়ে ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর রাস্তার দিকের অংশ ঢেকে দেওয়া হবে, যাতে কলকাতা থেকে আসা সচিব কিংবা আধিকারিকদের চোখে আবর্জনার স্তূপ না-পড়ে। রবিবার সকালে জানা যায় মুখ্যমন্ত্রী আসবেন হেলিকপ্টারে। মন্ত্রী-আমলারা আসবেন সড়কপথে। প্রশাসনের কর্তারা ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন, বাঁশের ব্যারিকেড নীল-সাদা কাপড়ে ঢেকে ফেলতে হবে। ঠিকাকর্মীরা নির্দেশ মেনে ৪৫০ ফুট লম্বা বাঁশের ‘পাঁচিল’ নীল-সাদা কাপড়ে মুড়ে দেন।

Advertisement

এই দৃশ্য দেখে প্রশাসনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সুনীল গুপ্তর টিপ্পনি, “সরকার দেখাতে চাইছে, সবাই ‘দুধে-ভাতে’ রয়েছেন। সব কিছু সাজানো-গোছানো সুন্দর রয়েছে। এ সব দেখে হবুচন্দ্র রাজা আর তাঁর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর কথা মনে পড়ছে।’’ পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর খোকন দাসের পাল্টা জবাব, “অতিথি এলে সবাই বাড়িকে পরিষ্কার করেন। প্রয়োজনে রং-ও করেন। পুরসভা ও প্রশাসন মিলে অতিথিদের কথা মাথায় রেখেই ওই কাজ করেছে।”

তবে প্রশাসনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শহরবাসীও। ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভ্যানচালকের কথায়, “ময়লা ফেলার জায়গা সরবে কিনা জানি না, তবে মুখ্যমন্ত্রী আসায় ক’টিন কাপড়ে ঢাকা থাকবে ওই জায়গা। তাতে কয়েকদিনে জন্য হলেও আবর্জনা ফেলার দৃশ্য দেখতে হবে না। এটাই প্রতি বছর হয়ে আসছে।” স্থানীয় বাসিন্দা পূজা ভট্টাচার্যর মন্তব্য, “আবর্জনা উপচে রাস্তায় চলে আসে। নাকে রুমাল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এলে প্রতি বছর রাস্তার আবর্জনা তুলে ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এ নিয়ে যাওয়া হয়।” এক ব্যবসায়ীর কটাক্ষ, “বাঁশের পাঁচিল আর নীল-সাদা কাপড় দিয়ে শহরকে পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। এতে চোখ আরাম পেলেও, গন্ধ আটকানো যায়নি।” আর এক শহরবাসীর মন্তব্য, ‘‘আমরা প্রতিদিন ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এর কারণে দূষণে জেরবার হচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বাঁশের ‘পাঁচিল’ দিয়ে দৃশ্যদূষণ আটকানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন।’’

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ১৩০ টন আবর্জনা ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড-এ ফেলা হয়। তার পরে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে দিনভর পরিষ্কার করা হয় ওই জায়গা। তবে এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের দাবি, তার পরেও বর্ধমান-কালনা রোডের উপরে আবর্জনা পড়ে থাকে। সেই আবর্জনা পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয়। কখনও আবার আবর্জনা উড়ে আশপাশের বাড়িতেও পড়ে।

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ওই জায়গাটি পরিষ্কার করে বায়ো-গ্যাস বা সার তৈরির একটি প্রকল্প রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ‘বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট’ করার জন্য কেএমডিএ-কে দায়িত্ব দিয়েছে। পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ বলেন, “সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট চালু হলে, এই চেহারা থাকবে না।’’ ততদিন অবশ্য নাকে রুমাল দিয়েই চলতে হবে, ধারণা শহরবাসীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement