প্রতীকী ছবি
মার্চ থেকে জুন— এই চার মাসে জেলায় ১৩,০৯২ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, এমনই বার্তা দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলাকে সতর্ক করল রাজ্য। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সতর্কবার্তা জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছে। জেলা থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার চোখরাঙানিতে পরপর রক্তদান শিবির বাতিল হতে শুরু করেছে। যার জেরে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে ‘রক্তাল্পতা’ শুরু হয়ে গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় তিনটি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক ও একটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। সেগুলির কর্তারা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ শিবির হয় ক্লাব, প্রাথমিক স্কুল চত্বরে। স্কুলগুলি বন্ধ থাকায় সেখানে শিবির করার উপায় নেই। জমায়েতে নিষেধ থাকায় বিভিন্ন ক্লাব রক্তদান শিবির বাতিল করছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াই হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগীর মাসে দু’বার করে রক্ত দরকার হয়। লিউকিমিয়ায় আক্রান্ত ১৭৫ জনের নিয়মিত রক্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া অস্ত্রোপচার, ডায়ালিসিস, প্রসব ও পথ দুর্ঘটনার মতো নানা ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত প্রয়োজন হয়। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বহু নার্সিংহোমে নিয়মিত রক্ত সরবরাহ করতে হয় সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ককে।
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মহম্মদ আসরাফুদ্দিন (বাবু) জানান, বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করে ব্লাড ব্যাঙ্ক পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। অথবা, ছোট-ছোট শিবির করে রক্তদানের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু করোনা-আতঙ্ক এতটাই চেপে বসেছে, যে সহজে কিছু হবে না। একই বক্তব্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক কর্তার। তিনি বলেন, ‘‘চলতি সপ্তাহে পাঁচটি শিবির ছিল। তার মধ্যে চারটিই বাতিল করে দিতে হয়েছে। রক্তে টান পড়তে শুরু করেছে। পাঁচ-সাত দিন পরে অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াবে।’’ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেখানে দু’টি শিবির বাতিল হয়েছে। সেখানকার ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, তিন দিন পর থেকে রক্ত নিয়ে হাহাকার শুরু হয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসন। শনিবার একটি বৈঠকের পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘আমরা পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’ জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘ছোট-ছোট দল গড়ে রক্তদান শিবির করা হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই রক্ত নেবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সাধারণ প্রশাসন ও পুলিশকে এ নিয়ে সচেতন হতে
বলা হবে।’’