এই আবহে শরীরখারাপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না চিড়ায়াখানার পশুপাখিরাও। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল জনসাধারণ থেকে জীবজন্তু সকলে। প্রায় দেড় মাস ধরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির সঙ্গে জল জমেছে যত্রতত্র। এই আবহে ঘরে ঘরে সর্দিকাশি ও জ্বরে কাবু সবাই। শরীরখারাপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না চিড়ায়াখানার পশুপাখিরাও। মানুষের মতো কি কুমিরেরও সর্দি হতে পারে? বর্ষায় ভাল্লুকেরও কি হতে পারে চর্মরোগ? বাঘেদের পায়ে কি বর্ষার জলে হাজা হতে পারে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বুধবার আনন্দবাজার ডট কম গিয়েছিল বর্ধমানের রমনারবাগানের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে।
—নিজস্ব চিত্র।
মানুষের মতো পশুপাখিদেরও বর্ষায় নানা রকমের সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। বহু প্রাণী এই বর্ষায় বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। রমনারবাগান অভয়ারণ্যের সুপারভাইজ়ার তরুণকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বারের বর্ষা অনেক দিন ধরে টানা চলছে। বর্ষার জলে রমনারবাগানের লাগোয়া এলাকাগুলো জলমগ্ন। এ রকম বর্ধমানে সাধারণত হয় না। এই মরসুমে চিড়ায়াখানার অনেক প্রাণীই নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। তা-ই বেশ কিছু সতর্কতা নিতেই হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের এই সময় নানা ধরণের সংক্রমণ হতে পারে। বর্ষার জলে রমনারবাগানের লাগোয়া এলাকাগুলো জলমগ্ন। তাই বিশেষ সতর্কতা নিতেই হয়।
তরুণকান্তি জানান, পশুদের বাসস্থান শুকনো রাখতে হয়। এদের ঠান্ডা যাতে না লাগে সে দিকে নজর রাখতে হয়। চর্মরোগ থেকেও ওদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা হয়। এজন্য প্রতিদিন চিকিৎসক আসেন। প্রয়োজনমতো ওষুধ দেওয়া হয়। খাবারের ক্ষেত্রে নানা ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। নিরামিষাশীদের শাকসবজি, ফলমূল দু’বারের জায়গায় তিন বারে ভাগ করে দেওয়া হয়। আমিষাশীদের খাবেরে বিশেষ নজর রাখতে হয়। এ সময় সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই খাবার দেওয়ার আগে ও পরে পাত্রগুলি ভাল করে পরিষ্কার করা হয়। তিনি আরও জানান, বাঘ, ভালুকের বাসস্থান শুকনো রাখতে পাখা ও ব্লোয়ার ব্যবহার করা হয়। কুমিরের জলাশয়গুলি যাতে জলে উপচে না পড়ে সেটা খেয়াল রাখতে হয়। সময়মতো জল পাম্প করে রাখা হয়। হরিণ ও তাদের বাচ্চাদের উপর নজরে রাখা হয়।
—নিজস্ব চিত্র।
রমনারবাগানের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মোট আয়তন ১৪ হেক্টর। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এটি অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তার পর থেকে নানা রকমের পশু-পাখির বসবাস এখানে। প্রচুর শাল, সেগুন, মেহগিনী গাছ দিয়ে ঘেরা এই অভয়ারণ্য। প্রচুর শাল, সেগুন, মেহগেনী গাছের এই অরণ্য শহরের অক্সিজেন। এখন একটা পুরোদস্তুর চিড়িয়াখানা হয়ে উঠেছে এটি। প্রকৃতির মাঝেই চিড়ায়াখানার প্রাণীদের রাখা হয় ঘেরা জায়গার মধ্যে (এনক্লোজ়ার)। এখানে আছে বেশ কয়েকটি চিতাবাঘ, একটি ভাল্লুক, নোনা জলের কুমির, চারটি মেছো কুমির, হায়না, শিয়াল, সজারু এবং আছে অজস্র হরিণ। পাশাপাশি আছে অসংখ্য পাখি। যার মধ্যে রয়েছে ময়ূর, ফেজেন্ট, পেলিক্যান-সহ আরও অনেক দুস্প্রাপ্য পাখি। আছে আরও নানারকমের কয়েকশো প্রাণী। চিড়ায়াখানা সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই চিড়ায়াখানায় আসতে চলেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, জলহস্তী-সহ আরও নানা প্রাণী।
বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসক পার্থ সরকার জানান, এই সময়ে পশুদের বিশেষ যত্ন দরকার। গৃহপালিত বা গবাদি পশুর মতো চিড়িয়াখানার পশুদেরও সমস্যা হতে পারে। তিনি বলেন, “পশুদের কৃমি থেকে নানা ধরণের রোগ হতে পারে। তা-ই কৃমির প্রতিষেধক প্রয়োজন হয়। জলের প্রাণীদের ক্ষেত্রে জলের বিভিন্ন একক দেখতে হয়। সংক্রমণের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। এ ছাড়াও অসুখ হলে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে বর্ষার মধ্যেও রমনারবাগানের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পর্যটকেরা আসছেন। বাইরের জেলা এমনকি ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকেও অনেক পর্যটকেরা আসছেন। তবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, জলহস্তী বা সিংহ চিড়িয়াখানায় এলে পর্যটকদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী চিড়ায়াখানার একাংশ।