নিয়ামতপুরের মাদ্রাসাপাড়া এলাকা। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে গিয়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল কুলটির নিয়ামতপুরে। এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই আসানসোল পুরসভা এলাকা কতখানি ‘নির্মল’ সে প্রশ্ন করেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের অবিযোগ, এলাকার একশোরও বেশি বাড়িতে শৌচাগার নেই। তাই ছুটতে হয় ঝোপ-জঙ্গলেই।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৈরির পরেই একে ‘নির্মল’ করে তোলার বিষয়ে বিশেষ নজর দেয় রাজ্য প্রশাসন। সেই মতো আসানসোল পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডে প্রায় ৪৭ হাজার শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সেই পরিকল্পনা কত খানি সফল হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আসানসোলবাসী। সম্প্রতি, ভারতী ভবনে আয়োজিত রাজ্যের মুখ্যসচিবের পরিচালনায় হওয়া প্রশাসনিক বৈঠকেও শৌচাগার তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার কাক ভোরে আসানসোল পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়ামতপুরের মাদ্রাসাপাড়া লাগোয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খোলা স্থানেই শৌচকর্ম করতে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। কেন এমনটা? স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ওয়াসিমের ক্ষোভ, ‘‘কী করব? বাড়িতে শৌচাগার নেই। পুরসভা শৌচাগার তৈরির টাকাও দেয়নি।’’ যদিও আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর) তথা এলাকার কাউন্সিলর মীর হাসিম বলেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য সচেতনতা প্রচার চলছে। সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের আবেদনপত্রও নেওয়া হচ্ছে। পুরসভার কাছে টাকা চেয়ে এ পর্যন্ত ৪২৭টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রত্যেক আবেদনকারীকে আট হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।’’ পুর কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, আগামী তিন মাসের মধ্যে শহরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়ে যাবে।
যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারিতেও একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। নিয়ামতপুরের ঘটনার আগে জামুড়িয়ার নিঘাতেও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে গিয়ে হামলার অভিযোগ করেছিলেন এক বধূ।
শহর যে এখনও নির্মল হয়নি তা স্বীকার করেছে পুরসভা। আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।’’ তবে সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এ পর্যন্ত নাগরিকদের মধ্যে সার্বিক সদিচ্ছা তৈরি করা যায়নি।’’ এই পরিস্থিতিতে অন্তত তিরশটি ওয়ার্ড চিহ্নিত করে সচেতনতা প্রচারের কথা জানিয়েছেন পুর কমিশনার তথা আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি।