দামের আঁচে পোস্ত ভুলছে রাঢ়বঙ্গ

জুন মাসে কেজি প্রতি পোস্তর দাম ছিল সাতশো টাকা। জুলাইয়ে হয় এগারোশো টাকা। এখন দাম বারশো টাকা কেজি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ইলিশ, খাসির মাংসকে টপকে গেল পোস্ত। শহরবাসীর আক্ষেপ, ন’শো-হাজার টাকায় ভাল ইলিশ পাওয়া গেলেও পোস্ত এখন দেড়-হাজারি!

Advertisement

পোস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, জুন মাসে কেজি প্রতি পোস্তর দাম ছিল সাতশো টাকা। জুলাইয়ে এক ধাক্কায় তা পৌঁছয় এগারোশো টাকায়। এখন পোস্তর দাম বারশো টাকা কেজি। এমনটা চললে এ সপ্তাহেই দাম দেড় হাজার ছুঁয়ে যাবে, দাবি তাঁদের। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত তিন সপ্তাহে পোস্তর বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভিন্‌ দেশ থেকে আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে বলেও তাঁদের দাবি।

রাঢ়বঙ্গের বাসিন্দাদের পাতে পোস্ত না হলে খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না। আলু পোস্ত, পটল পোস্ত, ঝিঙে পোস্ত থেকে পোস্তর বড়া বা রুই পোস্ত, কিছু না কিছু পাতে থাকে। নিদেনপক্ষে পোস্ত বাঁটা। কিন্তু গত সপ্তাহ কয়েক ধরে নামমাত্র পোস্ত বা পোস্ত ছাড়া খাওয়া অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। ভাতারের বাসিন্দা সুদর্শন দত্ত বলেন, “প্যাকেটজাত পোস্তর দামই হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। খোলা বাজারের ভাল পোস্ত চোখেই দেখতে হবে, ছোঁয়ার উপায় আর নেই!” মাসকাবারি মুদিখানা বাজার করতে গিয়েও আগে যাঁরা অন্তত আড়াইশও গ্রাম পোস্ট কিনতেন, এখন তাঁরা একশো গ্রামের প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন দাবি পাড়ার মুদি দোকানিদের।

Advertisement

বর্ধমানে পোস্তর পাইকারি বাজার রয়েছে নতুনগঞ্জে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, আগে চার রকমের পোস্ত বিক্রি হতো। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে এক রকমেরই পোস্ত বিক্রি হচ্ছে। যার দাম কেজি প্রতি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। ব্যবসায়ীদের হিসেবে, বর্ধমান শহর ও লাগোয়া এলাকায় প্রতিদিন আনুমানিক ৩০০ কেজি পোস্ত বিক্রি হয়। সেই বিক্রি অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী চন্দন হালদারের কথায়, “পোস্তর আমদানি নেই। সে জন্যে হু হু করে দাম বাড়ছে। প্রতি কেজির দাম ১৫০০ টাকা হতে বেশি দেরি নেই।’’ শহরের একটি বড় মুদিখানা দোকানের মালিকও বলেন, “আমরা সরাসরি পোস্তা বাজার থেকে পোস্ত কিনে আনি। সেখানেও আমদানি নেই।’’

ব্যবসায়ীরা জানান, এ দেশে পোস্ত চাষ নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে জন্যে পোস্ত দাম একটু বেশিই থাকে। যে টুকু পোস্ত আমদানি হয়, তা মূলত আসে তুরস্ক, চিন ও চেক প্রজাতন্ত্র থেকে। এ দেশের মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কিছুটা পোস্ত চাষ হলেও তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। ফলে বছর ভরের চাহিদা মেটাতে বিদেশের জোগানই ভরসা। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক দশকে পোস্তর দাম এ ভাবে বাড়েনি।

অগত্যা, আমদানির জটিলতা না কাটলে রাঢ়বঙ্গের লোকজনকে একপ্রকার ভুলেই থাকতে হবে পোস্তর স্বাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন