potato farmers

ফলন বাড়লেও লাভের খাতায় ক্ষতিই

পুজোর পর থেকে লোকসানের মুখে পড়ছেন আলু সংরক্ষণকারীরা। আবার, জলদি আলু চাষ করেও দাম মিলছে না, অভিযোগ তাঁদের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৮
Share:

বোরো ধানের জমির যত্ন নিচ্ছেন চাষি। বর্ধমান ২ ব্লকের কুমিরকোলায়। নিজস্ব চিত্র

মাঠ থেকে জলদি আলু ওঠা শেষের দিকে। কিন্তু চাষের খরচ ওঠেনি বহু চাষির ঘরে। সঙ্গে বোরো মরসুম শুরুর মুখে সেচের জল মিলবে কি না, সে চিন্তাও পিছু ছাড়ছে না চাষিদের একাংশের। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি কোনও সরকারি উদ্যোগের দিশা দেখান কি না, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

পুজোর পর থেকে লোকসানের মুখে পড়ছেন আলু সংরক্ষণকারীরা। আবার, জলদি আলু চাষ করেও দাম মিলছে না, অভিযোগ তাঁদের। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে প্রায় এক লক্ষ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। যার একটা বড় অংশ ডিভিসির সেচখালের জলের উপরে নির্ভরশীল। ডিভিসির জলাধারে জলের অপ্রতুলতা ও বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় খাল সংস্কারের কাজ চলায় এ বার বোরোর জমিতে কতটা জল পৌঁছবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে চাষিদের।

গলসি, আউশগ্রামের মতো কয়েকটা ব্লকে ডিভিসির জল পাওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। গলসি ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচখালের জল জমিতে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। আউশগ্রামের কয়েকটি জায়গাতেও দীর্ঘ দিন ধরে সেচের জল পৌঁছয় না, দাবি চাষিদের। ভাতারের অনুপম সামন্ত, আউশগ্রামের সফিউল ইসলামদের দাবি, ‘‘সেচখালের জল মিলছে না। নদীতে জল থাকলেও রিভার পাম্প খারাপ থাকায় জল তোলা যায় না। বাধ্য হয়ে সাবমার্সিবল পাম্পের জল কিনতে গিয়ে প্রতি বিঘায় বাড়তি দু’হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। চাষের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা যাতে ঠিক থাকে, সে দিকে মুখ্যমন্ত্রী নজর দিলে ভাল হয়।’’

Advertisement

গত দু’বছর একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ধান, আলুর ফলন কম হয়েছিল। আবার গুণগত মান ভাল ছিল না বলে আলু হিমঘরে রেখেও দাম পাননি চাষিরা। রফতানি করার সমস্যা, ভিন্‌ রাজ্যে বিক্রি করতে গিয়ে অসুবিধা হওয়ায় খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন অনেকে। কমে লাভের পরিমাণ। চাষিদের দাবি, এ বার আমনের ফলন ভাল রয়েছে। ধানের দামও ঊর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতি এমন চললে লাভের আশাদেখছেন তাঁরা।

জেলায় ৭৮ হাজার হেক্টরের কাছারাছি জমিতে আলু চাষ হয়। গত বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বেশ কিছু মৌজায় দু’বার করে আলু চাষ করতে হয়েছিল। কমেছিল চাষের এলাকা। তার পরেও খেত থেকেই জলদি আলু প্রতি প্যাকেট (৫০ কেজি) প্রায় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। আর জ্যোতি আলুর দর উঠেছিল ৯০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুজোর পরে আলুর দাম পড়তে থাকে। হিমঘরে যথেষ্ট পরিমানে আলু মজুত থাকায়, ডিসেম্বরের শেষে আলুর প্রতি প্যাকেট বিকিয়েছে মাত্র ২৫০ টাকায়।

চাষিদের দাবি, জেলায় মোট আলুর জমির ৭ শতাংশে জলদি চাষ (পোখরাজ, এস ওয়ান প্রজাতি) হয়। পুরনো আলু এখনও বাজারে থাকায় নতুন আলুর দাম মিলছে না। ফলে, প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। চাষিরা জানান, এক বিঘা আলু চাষ করতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি গড় ফলন হয় ৭০-৮০ প্যাকেট। ফলন ঠিক থাকলেও আলুর দাম মিলছে প্রতি কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা।

রায়না ১ ব্লকের চাষি তপন সামন্ত, বর্ধমান ২ ব্লকের তারক শেখদের অভিযোগ, ‘‘সার নিয়ে কালোবাজারি হয়েছে। ভাল বীজ অগ্নিমূল্য, জলও কিনতে হয়েছে। কিন্তু আলুর দাম নেই। জলদি আলুর চাষ কম হয়। চাষিরা লোকসান সহ্য করে নিয়েছেন। কিন্তু জ্যোতি আলুর দাম না পেলে চাষিদের মুখের হাসিউড়ে যাবে।’’

কৃষি দফতর, কৃষি বিপণন দফতরের একাধিক কর্তার দাবি, ধান-আলুর ফলন বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই দামে প্রভাব পড়বে। সেই অবস্থায় লাভের মুখ দেখার হাতিয়ার হতে পারে বিকল্প চাষ। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন