অবৈধ মদের কারবারে অশান্তি

হাতের নাগালেই হরেক রকমের মদ। আর সেই মদের বিকিকিনি অনেকটাই অবৈধ পথে, অভিযোগ আসানসোল মহকুমার নানা প্রান্তের নাগরিকদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, এই কারবার বন্ধে আবগারি দফতর বা প্রশাসন তেমন সক্রিয় না হওয়ায় বাড়িতে, পথেঘাটে বিপত্তি বাড়়ছে। এই কারবারের কারণে অনেক সময়ে অসামাজিক কাজকর্ম ও গোলমালের অভিযোগও উঠছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৩
Share:

হাতের নাগালেই হরেক রকমের মদ। আর সেই মদের বিকিকিনি অনেকটাই অবৈধ পথে, অভিযোগ আসানসোল মহকুমার নানা প্রান্তের নাগরিকদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, এই কারবার বন্ধে আবগারি দফতর বা প্রশাসন তেমন সক্রিয় না হওয়ায় বাড়িতে, পথেঘাটে বিপত্তি বাড়়ছে। এই কারবারের কারণে অনেক সময়ে অসামাজিক কাজকর্ম ও গোলমালের অভিযোগও উঠছে।

Advertisement

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, কুলটির মিঠানি, আলডি, আসানসোলের লোয়ার চেলিডাঙা, রানিগঞ্জের বল্লভপুর, অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর-সহ মহকুমার নানা প্রান্তে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে মদের অবৈধ দোকান। এমনকি, নিয়ামতপুর ফাঁড়ির সামনে, অণ্ডালের উখড়া পঞ্চায়েত অফিসের পাশে, জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে, পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় কারবার চলছে। পানগুমটি থেকে খাবারের হোটেল, সর্বত্র এই কারবারের রমরমা বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শুধু তাই নয়, বৈধ মদ অবৈধ ভাবে বিক্রির পাশাপাশি চলছে চোলাইয়ের কারবারও। তা তৈরি হয় স্থানীয় এলাকাতেই। এই মদের বোতলের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চোলাইয়ের রমরমা জামুড়িয়ার বাগডিহা, সিদ্ধপুর, চিচুড়িয়ায় বেশি। এ ছাড়া খনি এলাকার কিছু পাড়াতেও চোলাই পাওয়া যায়।

Advertisement

মদ ও চোলাইয়ের এই অবৈধ কারবারের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে সমাজে, মত নাগরিকদের। বছর দুয়েক আগে অণ্ডালের মাধবপুরে মদ্যপদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কৌশল সিংহ-সহ চার জন। কৌশলবাবুর কথায়, ‘‘এ ভাবে মদ বিক্রির কারণে গোলমাল নিত্য দিনের ঘটনা। কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের।’’ পেশায় শিক্ষক তথা কবি বিকাশ গায়েনের মতে, মদের নেশায় সব থেকে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। বিকাশবাবুর মতে, ‘‘এই নেশার কারণে ভাল মেধা নষ্ট হচ্ছে।’’

পথেঘাটে অশান্তির পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে বাড়িতেও, জানান রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারির মীনা বাউরি, অণ্ডালের কাজোড়ার অক্ষয় গোপ, পাণ্ডবেশ্বরের নবগ্রামের হাবিবুল শা’রা। তাঁদের মতে, এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে মদের টাকার জন্য গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও ঘটছে। রোজগারের টাকা উড়িয়ে সর্বস্ব খুইয়ে ফেলা লোকজনের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু কী ভাবে এলাকায় ঢুকছে অবৈধ মদ? সাধারণ ভাবে, এর প্রধান ‘উৎস’ বৈধ দোকানগুলিই, অভিযোগ নাগরিকদের। এ প্রসঙ্গে সরকারের নীতিকেও বিঁধছে বিরোধী দলগুলি। সিপিএম নেতা মনোজ দত্ত, বিজেপি-র আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি সভাপতি সিংহদের কথায়, “রাজ্য সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য আবগারি দফতরকে চাপ দিচ্ছে। এর ফলে ওই দফতর রাজস্ব বাড়াতে বৈধ দোকান থেকেই অনুমোদনহীন দোকানগুলিকে মদ কিনতে সাহায্য করছে। এক দিকে অবৈধ কারবার রোখার কথা বলে আর অন্য দিকে মদকে কেন্দ্র করে রাজস্ব আদায়, দুই নীতি এক সঙ্গে চলতে পারে না।’’ এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে অবৈধ মদের অন্য ‘উৎস’ হল, ঝাড়খণ্ড। কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, ঝাড়খণ্ডে মদের জন্য কর কম থাকায় আসানসোল শিল্পাঞ্চলের অনেকেই সেই মদ নেন।

কিন্তু, এই কারবার রুখতে সত্যিই কি কিছু করছে না পুলিশ ও প্রশাসন, নাগরিক সচেতনতাও কতখানি গড়ে উঠেছে, এ সব প্রশ্নও উঠেছে। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন