বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার পরে উল্টে পড়ে রয়েছে বাসটি। আটকে পড়েছে আরও যানবাহন। মঙ্গলবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
রাস্তা জুড়ে আড়াআড়ি ভাবে উল্টে পড়েছিল বাসটি। জখম যাত্রীরা কাতরাচ্ছিলেন এ দিক-সে দিক। তখনই উল্টো দিক থেকে পরপর আসছিল আরও তিনটে বাস। পরিস্থিতি দেখেই নিজেদের যাত্রীদের নামিয়ে আহতদের তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। প্রাণ বাঁচে জখম যাত্রীদের।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কে শ্রীখণ্ডে এনটিপিসি-র ফিল্ড অফিসের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ১৬ জন মহিলা-সহ ৭৩ জন যাত্রী জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৮ জন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়েছিল রাজ্য সড়ক। পরে উল্টে যাওয়া বাসটিকে সরানোর পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশের দাবি, যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলাতেই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সামনে চলা কয়েকটি মোটরবাইকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ দিন তীব্রবেগে ছুটছিল বাসটি। শ্রীখণ্ডে এনটিপিসি-র ফিল্ড অফিস ছেড়ে গাঙ্গুলিডাঙার দিকে যাওয়ার সময়ে আচমকা গতি কমায় মাটরবাইকগুলি। প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বাসটিও। আহত কাটোয়ার বাসিন্দা পিউ সাহা কিংবা মুর্শিদাবাদের সালারের রাজেশ শেখরা বলেন, “এরপরেই বাসটি ডান দিক-বাঁ দিক করতে থাকে। বেশ কয়েক মিনিট দুলতে দুলতে শেষে রাস্তার মাঝ বরাবর উল্টে যায় বাসটি।” চাষি থেকে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে এসে আহত যাত্রীদের বের করার কাজে হাত লাগান। স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা আহতদের শুশ্রূষা করেন। এর মধ্যেই এসে পড়ে ওই তিনটি বাস।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর-কাটোয়া, বর্ধমান-কাটোয়া ও গুসকরা-কাটোয়া রুটের ওই তিনটে বাসের কর্মীরা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আহত যাত্রীদের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই বসে ছিলেন বরাকর-কাটোয়া রুটের যাত্রীরা। তাঁদেরই এক জন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের ওয়াসিম আক্রম বলেন, “বর্ধমান যাব বলে বাসে উঠেছিলাম। শ্রীখণ্ডের এই জায়গায় এসে পরিস্থিতি দেখেই আহত যাত্রীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাসকর্মীরা আমাদের নেমে যেতে বলেন।” দুর্গাপুরের সগরভাঙা এলাকার বাসিন্দা অপূর্ব রায় কিংবা বুদবুদের তনুশ্রী দে-রাও বলেন, “শিশু-বয়স্কদের একটু অসুবিধা হলেও আহতদের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। বাসকর্মীরা ঠিক কাজটাই করেছেন।” আর বাসকর্মী লালন শেখ, নারায়ণ দাসরা বলেন, “এটা আমাদের কর্তব্য। কোনও বাস দুর্ঘটনায় পড়লে আমরা এ ভাবেই আহতদের তুলে কাছাকাছি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এ সব ক্ষেত্রে যাত্রীরাও আমাদের সহযোগিতা করেন।”
কাটোয়ায় কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের (আইএনটিউসি) সম্পাদক নারায়নচন্দ্র সেন বলেন, “তিনটি রুটের তিনটি বাসের কর্মীরা আহত যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যে ভূমিকা পালন করেছেন তাতে আমরা গর্বিত।”