ওঠার শক্তি নেই, শুয়েই পরীক্ষা দিচ্ছে ইন্দুভূষণ

একেই বোধহয় বলে মনের জোর। হাঁটা চলা করা তো দূরের কথা, বিছানা ছেড়ে এক মুহুর্তও উঠতে পারেন না। মেরুদন্ড সোজা হয় না। হাত পা সহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ বেঁকে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। তাতে কী? ওই অবস্থাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ছ’টি বিষয়ে লেটার-সহ ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন তিনি। এ বার টার্গেট উচ্চমাধ্যমিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০১:২০
Share:

বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষা দিয়ে বেরোচ্ছে ইন্দুভূষণ। —নিজস্ব চিত্র।

একেই বোধহয় বলে মনের জোর। হাঁটা চলা করা তো দূরের কথা, বিছানা ছেড়ে এক মুহুর্তও উঠতে পারেন না। মেরুদন্ড সোজা হয় না। হাত পা সহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ বেঁকে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। তাতে কী? ওই অবস্থাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ছ’টি বিষয়ে লেটার-সহ ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন তিনি। এ বার টার্গেট উচ্চমাধ্যমিক।

Advertisement

ছাত্রটির নাম ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য। জামুড়িয়ার বাসিন্দা ইন্দুভূষণ এ বারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁর লড়াইকে কুর্ণিশ করে পরীক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন আসানসোল ইস্টার্ন রেলওয়ে স্কুলের শিক্ষকেরা। ইন্দুভূষণের বাবা জামুড়িয়ার নন্দীগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য জানান, ২০০২ সালেমাত্র পাঁচ বছর বয়সে দুরারোগ্য স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয় তাঁর একমাত্র ছেলে। বহু চিকিৎসক দেখানোর পরেও রোগ সারেনি। ভিন রাজ্যেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। কিন্তু চিকিৎসকরা হাল ছাড়লেও ইন্দুভূষণ হাল ছাড়েননি। আসানসোলের ঊষাগ্রাম হাইস্কুলের এই ছাত্র মাধ্যমিক নজরকাড়া ফলের পর শারীরিক জটিলতাকে অবজ্ঞা করেই বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন।

বুধবার থেকে শুরু হওয়া উচ্চমাধ্যমিকে আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে স্কুলে সিট পড়েছে ইন্দুভূষণের। বাবার কোলে চেপে পরীক্ষা দিতে আসে সে। ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র জানান, তাঁর জন্য পৃথক একটি ঘরে শুয়ে পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। এ দিন পরীক্ষা দিয়ে বেরোবার পরে ইন্দুভূষণ জানায়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তাঁর জন্য আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র উৎসব সাধুকে লেখক হিসেবে ব্যবস্থা করেছে। ইন্দুভূষণের ইচ্ছে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার। তাঁর কথায়, “শরীরের এই অবস্থা নিয়ে কতদিন পড়াশোনা চালাতে পারব জানি না। কিন্তু আমি আরও পড়তে চাই। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোল্ডেন মুর্মূ পাশে না থাকলে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতাম না।” ঊষাগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোল্ডেন মুর্মূ বলেন, “ওর মাধ্যমিকের ফল দেখেই আমরা উৎসাহ পেয়েছি। সবরকমের সাহায্য করেছি। ওকে উৎসাহ যোগাতে আরোও সহযোগিতা করবো’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement