বিসর্জনে টাকা চাওয়া নিয়ে গুলি, নিহত যুবক

বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময়ে দুধের গাড়ি আটকে টাকা চাওয়া নিয়ে বচসা বাধে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের। গোলমাল চরমে উঠলে উদ্যোক্তাদের ছোড়া গুলিতে গোপন ঘোষ (২৪) নামে এক যুবক আহত হন বলেও অভিযোগ। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

ভাঙচুরের পরে পড়ে রয়েছে দুধের গাড়িটি। নিজস্ব চিত্র।

বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময়ে দুধের গাড়ি আটকে টাকা চাওয়া নিয়ে বচসা বাধে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের। গোলমাল চরমে উঠলে উদ্যোক্তাদের ছোড়া গুলিতে গোপন ঘোষ (২৪) নামে এক যুবক আহত হন বলেও অভিযোগ। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

শনিবার রাত ৯টা নাগাদ কাটোয়া থানার গিধগ্রামে ঘটনাটি ঘটে। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে সন্ধ্যায় পুলিশের পাহারায় গোপন ঘোষের দেহ গিধগ্রামে আনা হয়। মৃতের জ্যাঠা তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেনারাম ঘোষ কাটোয়া থানায় সরাসরি ১২ জনের নামে অভিযোগও দায়ের করেন। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দেড়েক ধরে একটি বহুজাতিক দুগ্ধ সংস্থার গাড়ি দিনে দু’বার গিধগ্রামের দুধ ব্যবসায়ীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ সংগ্রহ করে। শনিবারও গাড়িটি গ্রাম থেকে দুধ নিয়ে রাত ৯টা নাগাদ স্থানীয় মেঝিয়ারি গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। গিধগ্রামের পঞ্চাননতলায় বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল সেই সময়। ওই গাড়ির চালক, মন্তেশ্বরের বাসিন্দা তাপস কুণ্ডুুর অভিযোগ, “পুজোর উদ্যোক্তারা গাড়িটি আটকে দেয়। বেশিক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে দুধ নষ্ট হয়ে যাবে বললে মোটা টাকা চাঁদা চায়। টাকা দিতে পারব না বলার পরেই গাড়িতে হামলা চালানো হয়। আমাকেও রেহাই দেয়নি।” খবর পাওয়ার পরেই ওই গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী কেনারাম ঘোষ, গোপন ঘোষ, ভীষ্মদেব ঘোষ, বিষ্ণু ঘোষ, মাধব ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কাটোয়া থানায় লিখিত অভিযোগে কেনারামবাবুর দাবি, ‘ওই পুজো উদ্যোক্তারা গাড়ির চালকের কাছে মোটা টাকা দাবি করেন। চালক সেই টাকা দিতে পারবে না বলার পর মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর করে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। আমারা জিজ্ঞাসা করি, কী হয়েছে এখানে? তখন ওরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই।’ তখনই কপালে গুলি লেগে গোপনবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বলে কেনারামবাবুর দাবি। প্রতিমা রেখে পালিয়ে যায় উদ্যোক্তারাও। রক্তাক্ত অবস্থায় গোপনবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

দুধের ব্যবসায়ী গোপনবাবু আট মাস আগে বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রী চিন্তামনিদেবী অন্ত্বঃস্বত্তা। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। কেনারামবাবুর দাবি, গোপনবাবুর কপালে গুলি লাগার পরে ওই অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে উল্লাস করছিল। কাটোয়া থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতিতেই বিসর্জন হয়।

তবে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত গৌতম রায়চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “সপ্তমীর দিন থেকে ওরা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। বিসর্জনের সময় দুধের গাড়িটাকে একটু অপেক্ষা করতে বলা হয়। তারপরেই দেখি একগাদা লোক লাঠি, টাঙি, বন্দুক নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা প্রতিমা রেখে পালিয়ে যাই।”

অভিযুক্তদের দলীয় সমর্থক মেনে নিয়ে ঘটনায় চক্রান্তের অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দলের জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল বলেন, “বিজেপি ও সিপিএম যৌথ ভাবে চক্রান্ত করে আমাদের ছেলেদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” সিপিএম অবশ্য এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত রাজনীতি দেখছে না। দলের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মৃত যুবক আমাদের সমর্থক। অভিযুক্তরা তৃণমূলের সমর্থক। তা সত্ত্বেও আমরা এই ঘটনা গ্রামের ঘটনা বলেই মনে করছি।” বিজেপিও রাজনীতির যোগ দেখতে পায়নি। মঙ্গলকোটের বকুলিয়া গ্রামেও মহিলাদের মধ্যে সিঁদুর খেলা নিয়ে শনিবার বিকালে অশান্তি হয়। তার জেরে রবিবার সকাল থেকে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন