বহরমপুরে ইফতারে অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ভোটে তো জিতেইছিলেন। এ বার ভোজেও তৃণমূলকে হারালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর ইফতারের মজলিস টেক্কা দিল তৃণমূলের মান্নান হোসেনের আয়োজনকে। যা নিয়ে বুধবার দিনভর রসালো তর্কে সরগরম রইল বহরমপুর।
মঙ্গলবার তৃণমূলের রোজদারের পাতে পড়েছিল চারটে লুচি, দু’টো রসগোল্লা আর দু’টুকরো আলুর দম। বুধবার কংগ্রেসের রোজদারের জন্য বরাদ্দ ছিল নবাবি স্বাদের মটন বিরিয়ানি। শাসক দলের তরফে ইফতারের সামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল বেলডাঙার গোবিন্দসুন্দরী হাইস্কুলের মাঠে। বসতে দেওয়া হয় বৃষ্টিভেজা স্যাঁতসেতে মাটির উপর ত্রিপল বিছিয়ে। অন্য দিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন ম্যারাপ বাঁধা হয় বহরমপুরের জেলা কংগ্রেস ভবনের পিছনের মাঠে। বসার ব্যবস্থা ছিল কাঠের পাটাতন পাতা মেঝেয় সতরঞ্চি বিছিয়ে। কংগ্রেসের মহিলা রোজদারদের জন্য বরাদ্দ ছিল তিনতলা কার্যালয়ের ছাদে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মণ্ডপ। তৃণমূলের মহিলারা ইফতার সেরেছিলেন গোবিন্দসুন্দরী হাইস্কুল লাগোয়া খারিজি মাদ্রাসায়।
খাতা-কলমে মঙ্গলবারের ইফতার মজলিসের আয়োজক জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন হলেও মূল আকর্ষণ ছিলেন জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। বুধবারের ইফতার মজলিসের আয়োজকও খাতা-কলমে জেলা কংগ্রেস। তবে মূল আকর্ষণ প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। স্বভাবতই মান্নান-অধীরের রাজনৈতিক দ্বৈরথের মতোই ‘রেষারেষি’র এই দুই ইফতার মজলিস নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বাইরে আমজনতার মধ্যেও চলছে রসাল আলোচনা, ‘অধীর, না মান্নান— কার ইফতার মজলিস জমল ভাল?’ অধীরদার মটন বিরিয়ানির খুসবুর পাশে টিকতে পেরেছি কী মান্নানদার চারটে লুচি আর দু’টে রসগোল্লা! ঈদের আগে জোরালো হয়েছে সেই চর্চা।
প্রকৃতির রোষে পড়ে মান্নান সেমসাইড গোলও খেয়েছেন। বৃষ্টির দাপটে বেলডাঙার গোবিন্দসুন্দরী হাইস্কুলের মাঠ জুড়ে ছিল প্যাচপেচে কাদা। দুর্ভোগের জন্য মান্নান প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি স্থান নির্বাচনের বোকামির জন্য স্থানীয় ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক গোলাম কিবরিয়াকে ভর্ৎসনাও করেন। অন্য দিকে, বহরমপুরের ইফতার মজলিসের সুব্যবস্থার জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারের পিঠে পড়ল ‘দাদা’ অধীরের স্নেহের পরশ। যা দেখে শুনে কংগ্রেস শিবিরের দাবি— ‘অধীরদা গুণে গুণে গোল দিয়েছেন মান্নানকে।’ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি অশেষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসের মতো দেখনদারির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রীতিনীতি মেনেই সাদামাটা ভাবে ইফতার করেছি।’’
তৃণমূলের গোলাম কিবরিয়া জানালেন, আমাদের ইফতারের মেনুতে ছিল শশা, কলা, জিলিপি, পেঁয়াজি, ডিমের চপ, ছোলার ঘুঘনি দিয়ে মাখানো মুড়ি। অন্য একটা প্যাকেটে ছিল চারটে লুচি, দু’টো রসগোল্লা আর আলুর দম। সঙ্গে জলের বোতল। কংগ্রেসের তালিকা তুলনায় দীর্ঘ। নেতারা জানালেন, আদাকুচি, খেজুর, ভেজানো ছোলার ডাল, কলা, আপেল, শশা, জিলিপি, পেঁয়াজি, ঘুঘনি, মুড়ি তো বটেই— সঙ্গে ছিল নিম্বুপানি ও জলের দু’টি বোতল। পৃথক আর একটি কনটেনারে দেওয়া হয়েছে দু’পিস মাংস, আলুর দম-সহ মটন বিরিয়ানি। মায় রাজভোগও। রীতিমতো বিখ্যাত বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা নবাবি স্বাদের সেই বিরিয়ানি! কিস্তিমাতের ভঙ্গিতে শিলাদিত্য বলেন, ‘‘ইফতার মজলিসে হাজির থাকা সবাইকে দেওয়া হয়েছে একটি নমাজ পড়ার টুপিও।’’
তৃণমূল অবশ্য জিততে চেয়েছে সংখ্যায়। কেমন?
প্রাক্তন বিধায়ক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘‘দলের ইফতার মজলিসে গোটা জেলা থেকে ৭ হাজার তৃণমূল কর্মী এসেছিলেন।’’ মান্নান হোসেনের মতে সংখ্যাটি ১০ হাজার। আর পুলিশের মতো সংখ্যাটি হাজার তিনেক। অন্য দিকে, শিলাদিত্য বলেন, ‘‘তিন হাজারেরও বেশি লোক উপস্থিত ছিল।’’ সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও ‘কোয়ালিটি’তে পুঁজি করেছে কংগ্রেস।
এ দিনের মজলিসে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী-সহ দশ বিধায়ক, জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট চিকিৎসক আলি হাসান, ইতিহাস গবেষক খাজিম আহমেদ প্রমুখ।