Calcutta High Court

‘পুলিশকে কর্তব্য মনে করিয়ে দেওয়ার কোনও আইন নেই’! পরোয়ানা জারির ১৪ বছর পর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন হাই কোর্টের

কেন ‘অভিযুক্ত’কে গ্রেফতার করতে ১৪ বছর সময় লাগল, পুলিশের কাছে জানতে চায় হাই কোর্টের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের বেঞ্চ। আদালতের প্রশ্নে দু’টি যুক্তি দেখিয়েছে রাজ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:২৪
Share:

নিম্ন আদালতের পরোয়ানা জারির ১৪ বছর পর গ্রেফতার করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

২০১০ সালে নিম্ন আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতেই পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তার পরে কেটে গিয়েছে ১৪ বছর। অবশেষে ২০২৪ সালে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু সেই ধৃতের জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাই কোর্ট। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলল উচ্চ আদালত। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দেশে এমন কোনও আইন নেই যা পুলিশকে ঠিক সময়ে নিজ কর্তব্য পালন করার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

Advertisement

২০১০ সালে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানা এলাকায় এক গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ দাবি করে, ধৃতেরা কাজিম শেখ নামে স্থানীয় এক জনের নাম উল্লেখ করেন। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশ নিম্ন আদালতে দ্বারস্থ হয়। আবেদন করে, তদন্তের স্বার্থে কাজিমকে গ্রেফতারের প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশের আবেদনে মান্যতা দিয়ে কাজিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর কাজিমকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সেই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন কাজিম।

কেন ‘অভিযুক্ত’কে গ্রেফতার করতে ১৪ বছর সময় লাগল, পুলিশের কাছে জানতে চায় হাই কোর্টের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের বেঞ্চ। আদালতের প্রশ্নে দু’টি যুক্তি দেখিয়েছে রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্য, ২০২০ সালে জলঙ্গি এবং সাগরপাড়া— দু’টি আলাদা থানায় ভাগ হয়ে যায়। তখন এফআইআরটি সাগরপাড়া থানার কাছে পাঠানো হয়। তবে আদালত যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল তাতে জলঙ্গি থানার পুলিশের কথা উল্লেখ ছিল। এই জটের কারণেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

রাজ্যের এই যুক্তি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘এই যুক্তির কি আদৌ কোনও ভিত্তি রয়েছে? গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর। আর থানা ভাগ হয় ২০২০ সালে। ১০ বছর ধরে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। এটা কি আবেদনকারীর দোষ, না কি আদালতের?’’

শুধু থানা ভাগ নয়, রাজ্যের তরফে গ্রেফতারি দেরি হওয়ার নেপথ্যে আরও একটি কারণ আদালতে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ আদালতে জানায়, ১৪ বছর ধরে অভিযুক্ত পলাতক ছিলেন। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যদিও আবেদনকারী সেই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর দাবি, তিনি এত বছর ধরে সাগরপাড়া থানা এলাকায় নিজের বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ কখনওই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

হাই কোর্ট তার রায়ে বলে, ‘‘যদি তদন্তকারীরা বা সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকে, তা হলে আদালতের উচিত অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে তার বিচক্ষণতা প্রয়োগ করা। বিশেষত, এমন অভিযুক্ত যাঁর নাম অন্য ধৃতের থেকে পাওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নেই, তাঁর ক্ষেত্রে বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement