Pakistani in Indian Army

ভারতীয় সেনায় পাক চর? সিবিআই তদন্তে ‘উঠে এল অনেক তথ্য’, এফআইআর দায়েরের নির্দেশ কোর্টের

সেনাবাহিনীতে পাক চর ঢুকে পড়ার অভিযোগ তুলে যে মামলা হাই কোর্টে করা হয়েছিল, তাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। যা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ১৪:৩৭
Share:

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে জাল নথি ব্যবহার করে নিয়োগ হচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানের নাগরিকেরা ঢুকে পড়েছেন বলে কলকাতা হাই কোর্টে যে মামলা হয়েছিল, তা নতুন মোড় নিল বুধবার। হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সিবিআইকে এ বিষয়ে এফআইআর দায়ের করে দ্রুত তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিলেন। আদালতের নির্দেশেই বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখেছিল সিবিআই। তাদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি। বুধবার হাই কোর্টে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তার পরেই এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।

Advertisement

সিবিআই তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, জাল নথির মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যে নিয়োগ হয়েছে, তার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। অন্তত চার জনের বেআইনি নিয়োগের কথা জানতে পেরেছে সিবিআই। ওই নথির মাধ্যমে কোনও পাকিস্তানি নাগরিক সেনাবাহিনীতে ঢুকেছেন কি না, তা অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে বুধবার এই মামলার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। সেখানে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীতে অন্য দেশের নাগরিক ঢুকে পড়ার যে অভিযোগটি উঠেছে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে, এমনকি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তার গুরুত্ব রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ একাধিক রাজ্য থেকে জাল নথি ব্যবহার করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এ বিষয়ে এক জন মহকুমাশাসক (এসডিও) সিবিআইয়ের আতশকাচের তলায় রয়েছেন। অভিযোগ, ওই জাল নথিতে তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু তিনি স্বীকার করছেন না।

Advertisement

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সত্যিই পাকিস্তানি নাগরিক আছেন কি না, থাকলেও কী ভাবে এলেন, বিষয়টি নিয়ে আগেই সিআইডিকে প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পরে হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিবিআইকেও বিষয়টি দেখতে বলেন। আদালতের বক্তব্য ছিল, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।

উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতে পাকিস্তানের দুই নাগরিক কর্মরত বলে অভিযোগ উঠেছিল। তাঁদের নাম জয়কান্ত কুমার এবং প্রদ্যুম্ন কুমার। অভিযোগ, পাকিস্তান থেকে এসে তাঁরা ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছেন। সরকারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগও হয়েছে। ওই পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র জাল করে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা। এই অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন হুগলির বাসিন্দা বিষ্ণু চৌধুরী। এই ঘটনায় পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যুক্ত থাকার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি মান্থা।

সিবিআই জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনাতেই এমন কিছু জাল নথি দ্বারা নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতেও এ ভাবে নিয়োগ হয়েছে। অভিযোগ, শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভিন্‌রাজ্যেও এই নিয়োগের নজির রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, বিদেশি কোনও নাগরিক এই ধরনের জাল নথির মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়ে থাকতে পারেন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গোটা চক্রটিতে সরকারি আধিকারিকেরাও যুক্ত আছেন বলে দাবি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার বিচারপতি সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, এই রাজ্য সীমান্তবর্তী হওয়ায় কম নম্বরের মাধ্যমে এখানকার বাহিনীতে নিয়োগের একটা সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভিন্‌রাজ্যের নাগরিকেরা জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে, চক্রের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়ছেন। দ্রুত তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন।

পাশাপাশি বিচারপতির নির্দেশ, যত দিন না সিবিআই এই তদন্তের রিপোর্ট দিচ্ছে, তত দিন মামলাকারী বিষ্ণু চৌধুরীর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবে রাজ্যের পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন