CM Mamata Banerjee In Purba Bardhaman

‘বিজেপির ললিপপ হবেন না’! মঞ্চে মুখ্যসচিবকে নিয়ে মমতার তোপ কমিশনকে, জুড়ে দিলেন পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্থা-প্রসঙ্গও

বাংলার চার আধিকারিককে কেন্দ্র করে মমতার প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক চাপানউতর শুরু হয়। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তিকরণে কারচুপির অভিযোগ ওঠে ওই চার জনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৭:০৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তলবে সপ্তাহ দুই আগে দিল্লি গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই মনোজকে পাশে নিয়েই এ বার প্রশাসনিক সভা থেকে কমিশনকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘হাতের পুতুল।’ মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানে সরকারি কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইলেকশন কমিশন, আপনাকে অনেক প্রণাম জানাই, অনেক সেলাম জানাই। দয়া করে বিজেপির ললিপপ হবেন না। তা হলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।’’ সেই সঙ্গে ভিন্‌রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ‘আক্রমণ’ নিয়েও সরব হন মমতা। পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে এক বন্ধনীতে ফেলে প্রচার শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বাংলার চার আধিকারিককে কেন্দ্র করে মমতার প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক চাপানউতর শুরু। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তিকরণে কারচুপির অভিযোগ ওঠে ওই চার জনের বিরুদ্ধে। ওই চার জন হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব (১৩৭) বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, সহকারী এইআরও তথাগত মণ্ডল, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার ইআরও বিপ্লব সরকার এবং এইআরও সুদীপ্ত দাস। চার জনকেই সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু মুখ্যসচিব নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হবে না। করা হবে না এফআইআর-ও। তাঁদের মধ্যে দু’জন, যথাক্রমে বারুইপুর পূর্বের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদার এবং ময়নার এইআরও সুদীপ্তকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাজ্যের ওই সিদ্ধান্তের পরেই পদক্ষেপ করে নির্বাচন কমিশন। ঘটনাক্রমে কমিশনের তলবে দিল্লি যেতে হয় পন্থকে। দিল্লি থেকে মুখ্যসচিব ফেরার পরে গত ২১ অগস্ট চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করে রাজ্য। তবে ওই চার জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করার কথা কমিশন বললেও রাজ্য আপাতত তাদের কাছে ‘সময়’ চেয়েছে।

পন্থের দিল্লি যাওয়া, তার পর চার রাজ্য সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ডের পর মঙ্গলবারই ছিল মমতার প্রথম সরকারি কর্মসূচি। সেখানে দেখা গেল, সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচির মঞ্চ থেকেই কমিশনের উদ্দেশে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের অনেকে এ ক্ষেত্রে দু’টি দিক দেখছেন। প্রথমত, প্রশাসক মমতা কমিশনের নির্দেশ মেনে মুখ্যসচিবকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন। কমিশনের নির্দেশ মেনে চার আধিকারিককে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক স্তরে কমিশনের কথা মানতে হলেও রাজনৈতিক আক্রমণ জারি রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী। গত ৭ অগস্ট ঝাড়গ্রামে মমতার সরকারি কর্মসূচি ছিল। সেই মঞ্চ থেকেও মমতা ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে ভরসা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘কাউকে সাসপেন্ড করতে দেব না।’’ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। চার আধিকারিককেই সাসপেন্ড করতে হয়েছে।

Advertisement

ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘হেনস্থা’ নিয়ে মঙ্গলবার ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা বাইরে কাজ করেন, কেউ তাঁদের উপর দয়া করেননি। তাঁরা কাজ জানেন, তাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তাঁরা সোনার কাজ ভাল করেন। নির্মাণের কাজ ভাল করেন। তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জামাই-আদর করে। আজ তাঁদের ভাগ্যে জুটছে লাঞ্ছনা এবং বঞ্চনা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গুজরাতের লোকেদের কোমরে শিকল বেঁধে তাড়িয়ে দিয়েছে ট্রাম্প (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) সরকার। কিন্তু বাংলার মেধাকে তাড়াতে পারে না। ওঁদের ছাড়া হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড চলে না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের বলছি, ফিরে আসুন। এলেই গাড়িভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা পাবেন। পোর্টাল করে দেওয়া হয়েছে। বিডিও-র কাছে নাম লেখালেও হবে। ‘খাদ্যসাথী’ কার্ড পাবেন। বিনা পয়সায় রেশন পাবেন। বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য কোনও পয়সা লাগবে না। যে যে-ই ক্লাসে পড়াশোনা করত, এখানকার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশেও আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। নাম না-করে মঙ্গলবার মোদীকে দু’কান কাটা বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত শনিবার বঙ্গ সফরে এসে মমতার প্রাক্তন মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্যের নাম-না করে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাশাপাশি অভিযোগ করেন, তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। মোদীর ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারকে ‘চোর’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রাইম মিনিস্টারের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি। আমি তাঁর চেয়ারকে সম্মান করি। তাঁরও উচিত, আমাদের চেয়ারগুলিকে সম্মান করা। উনি কেন বলবেন, বাংলায় সব চোর? তাই তিনি নাকি টাকা বন্ধ করেছেন!’’

আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সবচেয়ে বড় চোর। মহারাষ্ট্রে আপনাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার, তারা সবচেয়ে বড় চোর। বিহার— সবচেয়ে বড় চোর। আগে তাদের দিকে নজর দিন।’’ ওই কথা বলার সময় মুখ্যসচিবের দিকে ঘুরে মমতা বলেন, ‘‘বাংলাকে অপমান করার জন্য ক’টা টিম পাঠিয়েছিলেন ওঁরা চিফ সেক্রেটারি? ১৮৬টি টিম। ভাবতে পারেন? সব পঞ্চায়েত তো আমাদের নয়। সব বিধায়কও আমাদের নয়। তা-ও সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোনও স্টুডেন্টকে যদি জ়িরো নম্বর দেন, সে কি মেনে নিতে পারে? সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেও বাংলাকে চোর বলছেন! আর চোর, গদ্দারদের নিয়ে মিটিং করছেন। লজ্জা করে না?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement