Madan Mitra IPAC

তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন আইপ্যাকের বিরুদ্ধে, সেই মদন ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখলেন বক্সীকে

২০১৯ সালের ‘ধাক্কা’ সামলে ২০২১ সালে তৃণমূল যে ভাবে জিতেছিল, তার নেপথ্যে অনেকেই আইপ্যাকের ভূমিকার কথা বলেন। কিন্তু মদন দাবি করেছিলেন, সেই ভোটেই টাকাপয়সা নিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৫
Share:

(বাঁ দিকে) মদন মিত্র এবং সুব্রত বক্সী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। মদনের সেই সব অভিযোগ নিয়ে সোমবার দুপুরের পর থেকেই জলঘোলা শুরু হয়েছিল দলে। সন্ধ্যার পর ‘অনুতপ্ত’ মদন চিঠি লিখলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। মদন সেই চিঠিতে জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে বলা তাঁর কিছু কথা ‘দলের ক্ষতি’ করেছে এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘মর্মাহত’ হয়েছেন। দুঃখপ্রকাশ করে মদন বক্সীর উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘দলকে অনুরোধ করছি আমায় ভুল না-বুঝে ক্ষমা করার জন্য।’’

Advertisement

বক্সীকে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন মদন। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আমায় কেউ কিছু বলেননি। কিন্তু এটা আমার মনে হয়েছে যে, আমার কিছু কথা দলের ক্ষতি করেছে। তাই আমি অনুতপ্ত হয়ে চিঠি দিয়েছি।’’

মদনের লেখা চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার এবিপি আনন্দকে মদন বলেছিলেন, ‘‘আমাদের পার্টিতে টাকাপয়সার লেনদেন ছিল না। এই একটা এজেন্সি আমাদের পার্টিতে ঢুকল। তারা এ সব শুরু করল।’’ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘ধাক্কা’ খাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আইপ্যাককে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। তখন সংস্থার মাথায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। ২০১৯ সালের ‘ধাক্কা’ সামলে ২০২১ সালে তৃণমূল যে ভাবে জিতেছিল, তার নেপথ্যে অনেকেই আইপ্যাকের ভূমিকার কথা বলেন। কিন্তু মদন দাবি করেছিলেন, সেই ভোটেই টাকাপয়সা নিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের প্রবীণ বিধায়কের বক্তব্য ছিল, ‘‘২০২১ সালের আগে এ সব শুরু হয়েছিল। টাকা নিয়েও নমিনেশন (মনোনয়ন) দেওয়া হয়নি। লোককে কাঁদতে দেখেছি!’’

Advertisement

আইপ্যাকের সমালোচনা করতে গিয়ে মদন এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘কামারহাটিতে আমাকে শেখানো হচ্ছে, সকালে উঠে কী ভাবে ব্রাশ করব! তার পর ডান দিকে তাকাব না বাঁ দিকে তাকাব। এরা শুরু করল!’’ মদন জানাচ্ছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নামী-দামি ছেলের কাছে শুনেছেন, তাঁরা কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ দিয়েছেন। মদনের কথায়, ‘‘এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছেন। তাঁরা কেউ নমিনেশন পাননি। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না। এত বড় বড় নাম তাঁদের।’’ মদনের দাবি, সেই সব লেনদেন পুরোটাই হয়েছিল নগদে। ফলে ‘প্রমাণ’ নেই।

তৃণমূলে এ কথা সর্বজনবিদিত যে, আইপ্যাকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর। গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে যে সমীকরণ দেখা যাচ্ছে, মদনের মন্তব্যকে অনেকেই সেই আলোয় দেখতে চাইছেন। তিনি কি অভিষেকের দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন? মদনের জবাব ছিল, ‘‘অভিষেকের বিষয়ে আমার হাতে কোনও তথ্য নেই। তাই সরাসরি ওঁর নাম আমি বলতে পারি না।’’ তবে মদন বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও দুর্নাম ছিল না। যেটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কালি লেগেছে, তা প্যাকওয়ালাদের জন্য।”

উল্লেখ্য, আইপ্যাক যখন কাজ শুরু করেছিল, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উঠেছিল। প্রাক্‌ ২০২১ পর্বে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামে স্থানীয় তৃণমূলের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছিল ওই পেশাদার সংস্থার কর্মীদের। তখন অনেক প্রবীণ নেতাও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাদের ‘নাক গলানো’ নিয়ে। তৃণমূলের অনেকেই আইপ্যাকের ভূমিকাকে ‘সমান্তরাল সংগঠন’ বা ‘পার্টির মধ্যে পার্টি’ তৈরি করা বলে অভিযোগ করেন। সে দিক থেকে মদনের অভিযোগ নতুন নয়। ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ এত সরাসরি কোনও নেতা এর আগে এতটা জোরগলায় এবং প্রকাশ্যে করেননি। কেন আচমকা এই প্রবীণ নেতা এমন মন্তব্য করলেন, তা কৌতূহল তৈরি হয়েছিল শাসকদলের মধ্যে।

মদনের বক্তব্য নিয়ে দলের তরফেও দু’রকম মত মিলেছিল। দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মনে করছিলেন, মদনের বক্তব্য দলের সিনিয়র নেতাদের ‘বিবেচনা’ করা উচিত। তাঁর কথায়, “মদন মিত্র সিনিয়র নেতা। তিনি যেটা বলেছেন, সেটা আরও সিনিয়র নেতাদের বিবেচ্য বিষয়। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তবে কুণাল বলেননি যে, দলের ‘অভ্যন্তরীণ’ কথা এ ভাবে প্রকাশ্যে বলা যায় কি না। যা বলেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘এ সব কথা দলের মধ্যেই বলা উচিত। এগুলো বাইরে বলা ঠিক নয়। আমি এ নিয়ে কিছু বলব না।’’

অবশেষে মদন অনুতাপ প্রকাশ করলেন। সরস্বতীপুজোয় চিঠি লিখলেন দলের রাজ্য সভাপতিকে। দল কি ক্ষমা করবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement