Meira Kumar

‘নির্দল’ মীরার নামে প্রস্তাবে তৃণমূলকে ফেরাল কংগ্রেস

বিধানসভায় শক্তির নিরিখে তৃণমূলের চার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার

একেবারে শেষ অঙ্কে পর্দার সামনে এলেন ‘নির্দল’ প্রার্থী দীনেশ বজাজ। কিন্তু তার আগে পর্দার আড়ালে চেষ্টা চলল অন্য সমীকরণ গড়ে তোলার। সমীকরণ দানা না বাঁধায় যা শেষ পর্যন্ত নেপথ্যেই থেকে গেল!

Advertisement

বাংলা থেকে রাজ্যসভার একটি আসনে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারকে সমর্থন করতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বার্তা পেয়ে শেষ বেলায় সক্রিয় হয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। কিন্তু বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়ে দিলেন, এআইসিসি-র সবুজ সঙ্কেত নিয়েই তাঁরা সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সমর্থন করছেন, তাঁর মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে সইও করে দিয়েছেন। এর পরে আর তৃণমূলের হাত ধরা সম্ভব নয়। প্রদেশ নেতৃত্বের মনোভাব বুঝে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আর এগোয়নি।

বিধানসভায় শক্তির নিরিখে তৃণমূলের চার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। চার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সময় থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বলা হচ্ছিল, ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ কোনও নাম থাকলে নির্দল প্রার্থী হিসেবে তাঁকে সমর্থন দেওয়া যেতে পারে। যদিও তার পরে আর এই নিয়ে প্রক্রিয়া বিশেষ এগোয়নি। এরই মাঝে বাম ও কংগ্রেস শিবিরের যৌথ প্রার্থী হিসেবে বিকাশবাবুর নাম চূড়ান্ত হয়। বিকাশবাবু মনোনয়ন জমা দেন বৃহস্পতিবার। সূত্রের খবর, অন্য দিকে তখন মীরার নাম নিয়ে বার্তা বিনিময় হয় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারই জেরে বৃহস্পতিবার বেশি রাতে আসরে নামেন এআইসিসি-র কোষাধ্যক্ষ আহমেদ পটেল। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মনোভাব তিনি বুঝে যাওয়ার পরেই অবশ্য মীরার সম্ভাবনায় ইতি পড়ে। তৃণমূলের অতিরিক্ত ভোটের ভরসায় শুক্রবার মনোনয়ন জমা দিতে যান ‘নির্দল’ প্রার্থী ও তৃণমূলেরই প্রাক্তন বিধায়ক দীনেশ বজাজ। তারও আগে অবশ্য স্বয়ং সনিয়া বিকাশবাবুর প্রার্থী-পদের বিষয়ে কথা বলে নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে।

Advertisement

সূত্রের খবর, তৃণমূলের বার্তা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে বৃহস্পতিবার বেশি রাতে ফোন করেছিলেন পটেল। কিন্তু মান্নান তাঁকে জানিয়ে দেন, এআইসিসি এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বাম প্রার্থী বিকাশবাবুর মনোনয়নে প্রস্তাবক হিসেবে তাঁরা সই করে দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমাও হয়ে গিয়েছে। এখন কী ভাবে অন্য কোনও প্রার্থীর জন্য রাজি হওয়া সম্ভব? এমনকি, মান্নান নিজে প্রার্থী হতে রাজি হলে তাঁর জন্যও সমর্থন আদায় সম্ভব বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পটেল। কিন্তু মান্নান রাজি হননি। বিরোধী নেতা জানিয়ে দেন, ৮ বছর আগে রাজ্যসভায় যাওয়ার নিশ্চিত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সনিয়ার নির্দেশে তৎকালীন জোটসঙ্গী তৃণমূলের জন্য তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এখন শেষ মুহূর্তে এমন কিছু তিনি করতে চান না, যার জেরে বাম ও কংগ্রেসের জোট ভেঙে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, আইনজীবী বিকাশবাবু দীর্ঘ দিন ধরেই মান্নানের আইনি লড়াইয়ের সঙ্গী।

প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘বামেদের সঙ্গে জোট গড়েই আসন্ন পুরসভা ও পরবর্তী বিধানসভা ভোটে লড়াইয়ের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। এটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এখন মীরা বা অন্য কারও জন্যই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করলে দলের অবশিষ্ট কর্মীরাও বিজেপির দিকে চলে যেতে পারেন।’’ পক্ষান্তরে, তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী লড়াইকে শক্তিশালী করতে মীরার মতো কোনও মুখকে কংগ্রেস চাইলে সমর্থন করা যেত। কিন্তু কংগ্রেসেরই একাংশ তা চায়নি।’’ গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী মীরার পক্ষে একসঙ্গেই ভোট দিয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেরা। তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের ইঙ্গিত, বিরোধী দলনেতা প্রার্থী হলেও তাঁরা সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবতে পারতেন। কিন্তু মান্নান নিজেই সে পথে যাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন