সমঝোতা শিকেয়

উপনির্বাচনে বামের মতো প্রার্থী কংগ্রেসেরও

রাজ্যে বিরোধী রাজনীতি আপাতত ফিরে গেল যথাপূর্বং অবস্থায়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরাতে ৬ মাস আগে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের যে আসন সমঝোতা গড়ে উঠেছিল, উপনিবার্চনে এসে তা ভেঙে গেল। কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা এবং মন্তেশ্বর বিধানসভা আসনের জন্য বামেরা আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

রাজ্যে বিরোধী রাজনীতি আপাতত ফিরে গেল যথাপূর্বং অবস্থায়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরাতে ৬ মাস আগে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের যে আসন সমঝোতা গড়ে উঠেছিল, উপনিবার্চনে এসে তা ভেঙে গেল। কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা এবং মন্তেশ্বর বিধানসভা আসনের জন্য বামেরা আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। সিপিএম জানিয়েও দিয়েছিল, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান মেনে আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত দোলাচল কাটিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসও সিদ্ধান্ত নিল, তারা তিন কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে। ফলে, তিন কেন্দ্রেই চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির বৈঠকের পরে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী সোমবার বলেন, ‘‘এই তিন কেন্দ্রে বামেরা একতরফা ভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা, সমর্থনও চায়নি। তার পরে কংগ্রেসের পক্ষে আর বামেদের সমর্থন করা সম্ভব নয়।’’ অধীরবাবু অবশ্য তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ রুখতে প্রার্থী না দেওয়ারই পক্ষে ছিলেন। বিধানসভা ভবনে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে সেই মত জানিয়েও ছিলেন। সেই সঙ্গে ভোটে লড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতিও নিয়েও চিন্তিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান সহ প্রদেশ নেতৃত্ব। কিন্তু দলের একাধিক বিধায়কের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত অধীর-মান্নানরা মত পরিবর্তন করেছেন। দিল্লিতে থাকায় মান্নান অবশ্য এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। যাওয়ার আগেই প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে মান্নান তাঁর মতামত লিখিত ভাবে এআইসিসি এবং প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন।

কেন কংগ্রেস নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচনে লড়ারই সিদ্ধান্ত নিলেন? বৈঠকে অধীরবাবু জানান, উপনির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সিপিএমের নেতাদের সমঝোতার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ফোনও করা হয়েছিল। কিন্তু সিপিএমের তরফে ইতিবাচক কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এর পরে আর আগ বাড়িয়ে সমর্থন করা সম্ভব নয়।

Advertisement

কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় তৃণমূলেরই কি সুবিধা হবে? এক পক্ষের মত, তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গিয়ে শাসক দলের সুবিধা হবে। অন্য পক্ষের আবার বক্তব্য, প্রার্থী না দিলে কংগ্রেসের ভোট শেষমেশ তৃণমূলেই যেত। এখন কিছুটা হলেও কংগ্রেস ভোট ধরে রাখলে তৃণমূলের অসুবিধা হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনার পরে মমতাকে রাহুল গাঁর্ধীর ফোন এবং বিজেপি-কে রুখতে কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার ইঙ্গিত মমতার— দু’দলের সম্পর্কের বরফকে কিছুটা হলেও উষ্ণতা দিয়েছে। তথাকথিত ‘জোট’ ভেঙে আপাতত কংগ্রেস বেরিয়ে আসায় জল কোন দিকে গড়ায়, তাতে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

বৈঠকে অধীর-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, কংগ্রেস ভোটে না লড়লে দলের ভোট তৃণমূল–সহ অন্য দিকে যাবে। অরুণাভ ঘোষও বলেন, সিপিএমের নিচু তলার কর্মীরা কংগ্রেসের সঙ্গে চলতে চান। প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্ত মেনে রাজ্য নেতৃত্বের কংগ্রেসের সঙ্গে চলায় অসুবিধা আছে। অমিতাভ চক্রবর্তীও প্রার্থী দেওয়ার পক্ষেই মত দেন। ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, লোকসভায় জোট ছিল না। তাই সে ক্ষেত্রে প্রার্থী দেওয়ার অসুবিধা নেই। কিন্তু পাঁচ মাস আগেও মন্তেশ্বরে বাম-কংগ্রেস একসঙ্গে ভোট চেয়েছে। সেখানে বিরুদ্ধে প্রচার করলে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। অধিকাংশ জেলা নেতা এবং বিধায়কেরা বলেন, ফল যা-ই হোক, সংগঠন ধরে রাখতে কংগ্রেসেকে লড়তে হবে। অধীরবাবু তাঁদের মতই মেনে নেন। জেলা থেকে আসা নামের তালিকা এ দিনই দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য সিপিএম তাদের আক্রমণের পথে যায়নি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস প্রার্থী দেবে, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। আমরা তো আগেই প্রার্থী দিয়েছি। উপনির্বাচনে বিধানসভা ভোটের মতো জোট বা আসন সমঝোতা হচ্ছে না।’’ বিরোধী শিবির ভাগ হয়ে গেলে শাসক দলের যে কিছু সুবিধা হবে, তা-ও মেনে নিয়েছেন শ্যামলবাবু।

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এ দিন ফের কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন। পরে উপনির্বাচনে কংগ্রেসের যে রবিউল আলম চৌধুরীর কাছে হেরেছিলেন, তিনি এখন তৃণমূলেই! রবিউলের বিধায়ক-পদ খারিজ হলে রেজিনগরে উপনির্বাচনে তিনি কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন বলে আশা করছেন হুমায়ুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন