‘ইচ্ছে করছে সীমান্তে গিয়ে এর বদলা নিতে, শত্রুদের গুঁড়িয়ে দিতে’

চ্যানেলে চ্যানেলে পুলওয়ামার জঙ্গি-হানার খবর। শক্ত চোয়ালে শিখাদেবী বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমরাও সীমান্তে যাই। শত্রুদের গুঁড়িয়ে দিয়ে আসি।’’

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩১
Share:

উরি হামলায় নিহত ছেলের ছবির সামনে শিখাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার দুপুরে টিভি দেখছিলেন তিন জনে। ওঙ্কারনাথ দলুই, তাঁর স্ত্রী শিখাদেবী এবং ছোট ছেলে বরুণ। চ্যানেলে চ্যানেলে পুলওয়ামার জঙ্গি-হানার খবর। শক্ত চোয়ালে শিখাদেবী বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমরাও সীমান্তে যাই। শত্রুদের গুঁড়িয়ে দিয়ে আসি।’’

Advertisement

ওঙ্কারনাথ, শিখাদেবী এবং বরুণ— দু’বছর আগে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের বাবা, মা এবং কলেজ পড়ুয়া ভাই। আগে তাঁরা থাকতেন জগৎবল্লভপুরের যমুনাবালিয়া গ্রামে। এখন কিছুটা দূরে প্রতাপপুরে। গঙ্গাধরের পেনশনের টাকায় দিন চলে। প্রতিদিন গঙ্গাধরের ছবিতে প্রণাম করেন ওঙ্কারনাথ ও শিখাদেবী। ওঙ্কারনাথের ক্ষোভ, ‘‘প্রথমে অনেক নেতা-মন্ত্রী এসেছিলেন। সবাই পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে দেখা গেল কেউ নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর আর্তি, ‘‘রাজ্য সরকার যদি আমার ছোট ছেলেকে কোনও চাকরি দেয়, আমরা বেঁচে যাই।’’

পুলওয়ামা-কাণ্ডে নিহতদের মধ্যে হাওড়ারই বাবলু সাঁতরা রয়েছে জেনে ওঙ্কারনাথদের মনে পড়ছে গঙ্গাধরের কথা। হামলার সময়ে গঙ্গাধরের বয়স ছিল ২২। তাঁর উপার্জনেই সংসার চলত। টালির চালের বাড়ির পরিবর্তে পাকা বাড়ি করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। গঙ্গাধরের বাবা বললেন, ‘‘প্রতাপপুরে এই জমিটি গঙ্গাধরই বেছেছিল। সেনাবাহিনী থেকে ওঁর পাওনাগণ্ডা দিয়েই জমিটি কিনে বাড়ি করেছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জঙ্গি হানায় স্বপ্ন শেষ দুই বাড়ির

তবে রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ওঙ্কারনাথরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। নিতে অস্বীকার করে দলুই পরিবার। ওঙ্কারনাথ বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যের সেনারাও উরিতে মারা যান। সেই সব রাজ্য সরকারের সহায়তার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এখানে মদ খেয়ে মৃত্যুতে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আবার জঙ্গি-হানায় মৃত্যুতেও তাই! তাই ওই টাকা নিতে চাইনি।’’ তবে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার দেড় লক্ষ টাকা জমা করে দেয়। সরকারি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তাঁর ছোট ছেলেকে চাকরি এবং নতুন বাড়ি করে দেওয়া হয়নি বলে ওঙ্কারনাথের অভিযোগ।

আরও পড়ুন: নিরাপত্তা উপদেষ্টা কী করছিলেন: মমতা

অভিযোগ মানেননি মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা নিজেরা নতুন বাড়ি করায় আর বাড়ি করে দেওয়া হয়নি। গঙ্গাধরের ভাইকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তিনি নেননি।’’ শিখাদেবী বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকে আর সেনাবাহিনী বা পুলিশে পাঠাতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন