যাত্রা শুরুর আগে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার বাগডোগরায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
বাগডোগরা থেকে কাঠমান্ডু সরাসরি উড়ান চালু হল বুধবার। এ দিন দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে বেসরকারি বিমান সংস্থা স্পাইস জেটের উড়ান বাগডোগরা থেকে ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু উড়ে যায়। ফেরার সময়ে বিমানে যাত্রী ছিলেন ১১০ জন। বাগডোগরায় বিমানটি নামে বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে। তারপরে কলকাতা রওনা হয় সাড়ে পাঁচটায়। প্রতি সপ্তাহে সোম, বুধ ও শুক্রবার বিমানটি কলকাতা থেকে এ ভাবেই বাগডোগরা হয়ে কাঠমান্ডু যাতায়াত করবে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা এই উড়ান চালু হওয়ায় খুবই খুশি। তাঁদের বক্তব্য, ডুয়ার্স বা পাহাড়ে যে পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন তাঁদের অনেকেই তারপরে কাঠমান্ডু যেতে চান। কেউ আবার কাঠমান্ডু হয়ে উত্তরবঙ্গে আসতে চান। দু’টি এলাকাই পর্যটকদের কাছে প্রিয়। কিন্তু এত দিন কাঠমান্ডু যেতে হলে সড়ক পথে নানা ঝক্কি পেরোতে হত। তাতে অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলতেন। ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল বলেন, “পুজোর মুখে পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা খুবই ভাল খবর।” তাঁর কথায়, বাগডোগরা থেকে সরাসরি উড়ানে কাঠমান্ডু যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় বিদেশিদের কাছে পাহাড়-ডুয়ার্সের আকর্ষণ আরও বাড়বে। বাগডোগরা-কাঠমান্ডু যেতে মাথা পিছু টিকিটের দাম পড়ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সময় লাগছে এক ঘণ্টার সামান্য বেশি। এই সপ্তাহের বুকিং ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলে ওই বিমান সংস্থা জানিয়েছে।
অন্য রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও এই উড়ান চালু হওয়ায় খুশি। রাজস্থানের ট্যুর অপারেটর রাহুল রাওয়াত জানান, বিদেশি পর্যটকদের দার্জিলিং বা ডুয়ার্স থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছে দিতে বা কাঠমান্ডু থেকে নিয়ে আসতে হলে এতদিন খুবই উদ্বেগে থাকতে হত। শিলিগুড়ি থেকে সড়ক পথে ভদ্রপুর গিয়ে সেখান থেকে বিমান কাঠমান্ডু যেতে হত। সড়ক পথে যাতায়াতে তল্লাশি, সীমান্ত পারাপারের নানারকম ঝক্কি পোহাতে হত পর্যটকদের। তার আঁচ সামলাতে হত ট্যুর অপারেটরদের। বুধবার থেকে অবশ্য সে ঝক্কি রইল না। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে রাহুলবাবু নিজেই এ দিন বাগডোগরা চলে এসে কাঠমান্ডুর বিমানে ওঠেন। শিলিগুড়ির বাসিন্দা স্মিতি থিরানিও প্রথম উড়ানের যাত্রী ছিলেন। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “আগে কখনও নেপাল যাইনি। সড়ক পথে সীমান্ত পার হওয়ার নানা ঝামেলার কথা শুনেছিলাম। সরাসরি বিমানের কথা শুনেই ছুটি কাটাতে যাচ্ছি।”
বিমানটি বাগডোগরা থেকে কলকাতা রওনা হচ্ছে বিকেলে। এর ফলে সপ্তাহে তিন দিন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারাও কলকাতায় যাওয়ার সন্ধ্যার বিমানও ধরতে পারবেন। এটি বাড়তি পাওনা বলে মনে করছেন পর্যটন দফতরের কর্তারা। এ দিন কাঠমান্ডুর উড়ানের আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। গৌতমবাবু জানান, বাগডোগরা থেকে ফের রাতের উড়ান শুরু করতেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “আরও বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের সঙ্গে বাগডোগরার সরাসরি উড়ানের জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন।”
২১০ আসনের বিমানটি সপ্তাহে তিন দিনের পরিবর্তে, প্রতিদিনই চালানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও পর্যটন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। পুজোর আগে বাগডোগরা-ঢাকা উড়ান চালু করার চেষ্টাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পর্যটন দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল অগ্রবাল।