অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সল্টলেকে ঝলসে মৃত যুবকের বাড়িতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
২৪ ঘণ্টাও কাটল না। আনন্দবাজার ডট কম-এ প্রকাশিত খবর পড়ে সল্টলেকে দুর্ঘটনায় মৃত ডেলিভারি বয় সৌমেন মণ্ডলের বাড়িতে ফোনের পর ফোন। বিকেলে পৌঁছে গেল তৃণমূলের প্রতিনিধি দলও। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সৌমেনের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে খামে ভরা নগদ ৫০ হাজার টাকা। পরিবারকে ভবিষ্যতে আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বাসন্তীতে সৌমেন মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার বিকেলে। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা সৌমেন কলকাতায় ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। গত ১৩ অগস্ট সল্টলেকের একটি সিগন্যালে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন পাশ থেকে একটি চারচাকার গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে। এর পর গাড়ির বিস্ফোরণে ঝলসে মৃত্যু হয় সৌমেনের। দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও এত দিন কোনও আর্থিক সাহায্য পায়নি যুবকের পরিবার। তাঁদের অনটনের সংসারে পাঁচ জনের পেট চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সৌমেনের দাদা সুপ্রিয়। আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি জানিয়েছিলেন, রোজ খাবার জুটছে না বাড়ির সকলের। সৌমেন মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। পরিবারের বাকিরা বেকার। বিধাননগর থানার কাছ থেকে অবশ্য প্রয়োজনমতো সাহায্য তাঁরা পেয়েছেন। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়চড়ে বসে শাসকদল।
বৃহস্পতিবার সৌমেনদের বাড়িতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন যুবকের বাবা। ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে নিজেদের অসহায়তা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। শাসকদলের নেতা রাজা গাজি জানিয়েছেন, অভিষেকের নির্দেশে আপাতত পরিবারটির হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার দিন থেকেই তাঁরা এই পরিবারের পাশে আছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। রাজা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি বলেন, ‘‘যে দিন এই দুর্ঘটনা হয়, সে দিন থেকে দলীয় ভাবে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা পাশে থেকেছি। দেহ এখানে এনে সৎকারের বন্দোবস্ত করে দিয়েছি। যা যা করা দরকার, করেছি। এই পরিবারের বক্তব্য আমরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলাম। তাঁর নির্দেশেই এখন ওঁদের বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। পরিবারটিকে আরও কিছু সাহায্য পাইয়ে দেওয়া যায় কি না, সেটা আমরা দেখব।’’
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ থেকে শুরু করে ‘স্বাস্থ্যসাথী’, রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির সাহায্য সঠিক ভাবে এই পরিবারের কাছে পৌঁছোচ্ছে কি না, তৃণমূল তারও খোঁজ নিয়েছে। শুধু তৃণমূল নয়, আনন্দবাজার ডট কম-এ খবর প্রকাশের পর সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সৌমেনের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানিয়েছেন। অনেকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে চাইছেন। আনন্দবাজার ডট কম-এর দফতরেও তাঁদের আর্থিক সাহায্য করতে চেয়ে একাধিক ফোন এসেছিল। এক অধ্যাপক এবং এক সমাজকর্মী দফতরে যোগাযোগ করেছেন। আপাতত শাসকদলের অর্থসাহায্যে কিছুটা স্বস্তিতে সৌমেনের দাদা। তবে চিন্তা এখনও থেকে গিয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘আনন্দবাজার ডট কম-এর এই খবরের পর আমরা সাহায্য পেলাম। তার জন্য সকলকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের এই আর্থিক সঙ্কটের স্থায়ী কোনও সমাধান হলে আর কারও কাছে হাত পাততে হত না।’’