Narada Scam

Narada Scam: তিন জন পিজিতে, জ্বর তবু যাননি ববি

কেউ যাতে তাঁকে ‘প্রভাবশালী’ তকমা দিতে না-পারেন, সেই বিষয়ে অতি মাত্রায় সতর্ক রয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ০৬:১৫
Share:

এসএসকেএমে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। (ডান দিকে) প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বেরিয়ে আসছেন ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও নিজস্ব চিত্র

সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পরে জেল হাজতে থাকাকালীন দীর্ঘদিন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মদন মিত্র। পরে আদালতে সেই তথ্য তুলে ধরে সিবিআই সওয়াল করেছিল, ‘প্রভাবশালী’ বলেই ওই অভিযুক্ত এত দিন হাসপাতালে থাকতে পারলেন। অন্য বন্দিরা পারেন না।

Advertisement

সেটা জানা থাকায় নতুন করে কেউ যাতে তাঁকে ‘প্রভাবশালী’ তকমা দিতে না-পারেন, সেই বিষয়ে অতি মাত্রায় সতর্ক রয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিম। ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, সেই কারণেই সোমবার রাতে এসএসকেএম বা পিজিতে যেতে চাননি ফিরহাদ। যদিও প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার আগেই, রাতে নিজ়াম প্যালেসে নারদ-কাণ্ডে ধৃত ফিরহাদ (ববি), মদন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পরীক্ষা করে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের চার জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। বাকি তিন জন হাসপাতালে চলে গেলেও যেতে চাননি ফিরহাদ।

জেল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি জেলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও সতর্ক ববি সেই সব সাক্ষাৎ পর্ব নাকচ করে দেন। শুধু আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন তিনি। রাতে জানা যায়, ফিরহাদের ১০২ জ্বর এবং পেটে ব্যথা। তার পরেও তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি হননি।

Advertisement

সোমবার রাত ১টা ২৫ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের চার অফিসার ওই চার অভিযুক্তকে নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর ঘরে ঢোকেন। আইন অনুযায়ী কাগজপত্র দিয়ে ওই চার জনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপারকে। জেল হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক পি কে ঘোষকে ডেকে পাঠান দেবাশিস। ডাক্তার চার জনকে পরীক্ষা করে এবং এসএসকেএমের সরোজ মণ্ডলের মতো চিকিৎসকের রিপোর্ট দেখে তাঁদের ওই হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু জেল সূত্রের খবর, তিন অভিযুক্ত সে-কথা শুনলেও বেঁকে বসেন ববি। বলেন, ‘‘আমার শরীর খারাপ লাগছে না। আমি জেল হাসপাতালেই থাকব।’’

তিন অভিযুক্ত রাত প্রায় ৩টে নাগাদ এসএসকেএমে চলে গেলেও মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ সুব্রত ফিরে আসেন জেলে। জানান, তিনিও ববির মতো জেলের হাসপাতালে থাকতে চান। যদিও সকালে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে আবার এসএসকেএমে পাঠানো হয়।

উডবার্ন ব্লকের ১০২ নম্বর ঘরে সুব্রত, ১০৩ নম্বরে মদন এবং ১০৬ নম্বর ঘরে রয়েছেন শোভন। তিন জনের চিকিৎসার জন্য চার চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। বোর্ডে আছেন মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৌমিত্র ঘোষ, কার্ডিয়োলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, বক্ষঃরোগ চিকিৎসক সোমনাথ কুণ্ডু এবং এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ। এ দিন ওই তিন অভিযুক্তই বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়েছেন।

হাসপাতালে সুব্রতকে দেখতে যান তাঁর স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়। সুব্রতর আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বয়স ৭৬ বছর। বয়সজনিত অসুখে ভুগছেন। সম্প্রতি তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁকে রোজ সকালে নেবুলাইজ়ার নিতে হয়। তিনি কী ওষুধ খাবেন, সেটাও দেখেন তাঁর স্ত্রী।’’

এ দিন সকালে প্রেসিডেন্সি জেলে ফিরহাদকে দেখতে যান তাঁর মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিম। পরে তিনি বলেন, “বাবা কোভিড মোকাবিলায় কাজ করছিলেন। তিনি কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান। শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেও এখন মানসিক ভাবে একটু ভেঙে পড়েছেন।’’ সোমবার গভীর রাতে নিজ়াম প্যালেস থেকে বেরোনোর সময়েও কান্নাভেজা গলায় ফিরহাদ বলেছিলেন, “আমাকে কোভিড মোকাবিলার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা (বিজেপি) কলকাতার মানুষকে বাঁচাতে দিল না।’’

এ দিন প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জেল সুপারের মাধ্যমে ফিরহাদকে কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট দেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ। পরে অতীন বলেন, "কোভিড মোকাবিলায় কী কী কাজ হয়েছে, তার রিপোর্ট ববিদার কাছে পাঠিয়েছি। আবার সুপারের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিবার্তা পেয়েছি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁর মতো মানুষকে নোটিস ছাড়াই গ্রেফতারের ঘটনা পুরসভা তথা শহরবাসীকে বড় অসুবিধায় তো ফেলে দিলই।"

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সুব্রত, মদন ও শোভন দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডি, হৃদ্‌যন্ত্রের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভুগছেন। শোভনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিসের জন্য কিডনির সমস্যা, মদনের পুরনো পেটের রোগ এবং করোনা-পরবর্তী ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। বয়সজনিত সমস্যার সঙ্গে উচ্চ ডায়াবিটিস আছে সুব্রতরও। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক সময় মদনের শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। মঙ্গলবার মাঝেমধ্যেই তাঁকে অক্সিজেন ও সি-প্যাপ দেওয়া হয়। সকালে তাঁর সুগারের মাত্রাও নেমে ৫৫ হয়ে যায়। শোভনকে কয়েক বার নেবুলাইজ়ার দেওয়া হয়েছে। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সুব্রতকে যখন এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁরও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। উডবার্ন ব্লকে ভর্তি করে তাঁকেও নেবুলাইজ়ার দিতে হয়। তার পরে তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। এ দিন তাঁদের সকলেরই বুকের এক্স-রে, ইসিজি করা হয়েছে। হয়েছে করোনা পরীক্ষাও। সেই রিপোর্ট আসার পরে আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে।

সূত্রের খবর, মানসিক অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা রয়েছে তিন জনেরই। হাসপাতালে ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিধায়ক দেবাশিস কুমার। শোভনের সঙ্গে দেখা করেন তাঁর ছেলে ঋষি। রাতে মদনের স্ত্রী অর্চনা মিত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মদনের প্রোফাইল থেকে সকলের কাছে আর্জি জানান, বুধবার যেন হাই কোর্ট চত্বরে কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় না করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন