সুন্দরবনের বাদাবনে অতন্দ্র প্রহরী। ছবি: শশীধর ভেম্পালা।
ভয়াল সৌন্দর্যই যেন সুন্দরবনের ট্রেড মার্ক। নোনা জলে ভরা নদী-নালা-খাঁড়ির এই বাদাবন হোক বা সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার—সবই ভয়াল সুন্দর। সব কিছুই প্রতিকূল।
পায়ে পায়ে সেই প্রতিকূলতাকেই সঙ্গী করে, রাত-দিন, শীত-বর্ষাকে উপেক্ষা করে ওঁরা লড়াই করছেন। সেই লড়াই একটি বিপন্ন প্রজাতিকে বাঁচানোর লড়াই। বাদাবনের গভীরে রাতের অন্ধকারে নৌকোয় চেপে বা হাঁটু পর্যন্ত কাদায় নেমে লড়াই করা এই বনকর্মীদের নিয়ে এ বার তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র— ‘গার্ডিয়ানস অব সুন্দরবন’।
নদী-নালায় ঘেরা সুন্দরবনে বরাবরই বেঁচে থাকার তাগিদেই বাঘের ঘরের অন্দরে ঢুকে পড়েছে মানুষ। তাই সংঘর্ষ অনিবার্য। কখনও মানুষ জিতেছে, কখনও বা বাঘ। পাল্টা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও বারে বারে ঢুকে পড়েছে মানুষের বসতিতে। এখানে বেঁচে থাকার লড়াই এতটাই কঠিন যে, কেউ কাউকে রেওয়াত করে না।
আরও পড়ুন
চিকিৎসক অমিল, এ বার ব্যানার-হোর্ডিং দিয়ে ডাক্তারের খোঁজ!
সেই পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই ছিল সংরক্ষণের প্রতিকূলতা। তাতেও হাল ছাড়েননি বনকর্মীরা। বাঘের গ্রামে ঢোকা বন্ধ করতে, সুন্দরবনের সাতটি রেঞ্জের মধ্যে ৯৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে টাঙানো হয়েছে শক্তপোক্ত নাইলনের জাল। যাতে জঙ্গল থেকে বাঘ গ্রামে ঢুকতে না পারে। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক বলেন, “এই জাল টাঙানোতে আশাতীত ফল পাওয়া গিয়েছে। গত তিন বছরে জঙ্গল থেকে বাঘের গ্রামে ঢোকার ঘটনা শূন্য। এর আগে প্রতি মাসে এ রকম ঘটনা ঘটত।” ওই বনকর্তা স্বীকার করেন, “মাঠে ময়দানে প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে যে বনকর্মীরা কাজ করছেন, সেই কর্মীদের এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে। ওই কর্মীরা অনুপ্রেরণা পাবেন আরও ভাল কাজ করতে।”
চলছে টহলদারি। ছবি: জয়দীপ কুণ্ডু।
তথ্যচিত্রর নির্মাতা শশীধর ভেম্পালা সেই কাজটাই করার চেষ্টা করেছেন। পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্তা শশীধর এর আগেও মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের বনকর্মীদের নিয়ে ছবি করেছেন। তাঁর ছবিতে সব সময়েই বনকর্মীদের সেই লড়াইটা দেখানো হয়েছে। শশীধরের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে এ রাজ্যের বন্য প্রাণ সংরক্ষনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শের’। সংস্থার অন্যতম প্রধান জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “শশীধরের এই ছবিতেও সুন্দরবনের বনকর্মীদের সেই জীবনটাই তুলে ধরা হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই এই ছবি বৌবাজারের সেন্ট জোসেফ কলেজের অডিটোরিয়ামে দেখানো হবে। সেখানে বক্তাদের তালিকায় থাকছেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণবিদ বিট্টু সেহগল। থাকছেন বন কর্তারাও। সুন্দরবনের সাতটি রেঞ্জ থেকে ২১ জন বনকর্মী থাকবেন যাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে রতনলাল ব্রহ্মচারী স্মারক পুরস্কার।