—প্রতীকী চিত্র।
হলুদ রঙের স্কুটারে রক্তের দাগ দেখে চণ্ডীতলায় খুনের কিনারা করল পুলিশ। হুগলিতে প্রেমিকার স্বামীকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছিলেন এক যুবক। মঙ্গলবার তাঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গত ৩১ অগস্ট চণ্ডীতলায় শ্রীমন্ত কোড়ার খুনের নেপথ্যে কারণ বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক।
চণ্ডীতলার হাটপুকুর এলাকায় একটি ডোবা থেকে ৫০ বছরের শ্রীমন্তের গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অদূরে পাওয়া যায় একটি স্কুটার। তাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখে তল্লাশি চালানো হয়েছিল এলাকায়। ঘটনার দু’দিনের মধ্যে খুনের কারণ বার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হল অভিযুক্তকেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত শ্রীমন্তের বাড়ি হুগলির পান্ডুয়া থানার চাঁদপুর গ্রামে। স্ত্রী টুম্পা ক্ষেত্রপালের সঙ্গে চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। শ্রীমন্ত পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। স্ত্রী টুম্পা স্থানীয় একটি জল কারখানায় কাজ করেন। সেখানেই টুম্পার সঙ্গে আলাপ হয় বরুণ হালদার নামে এক যুবকের। বরুণও হাটপুকুর এলাকায় বাড়িভাড়া করে থাকতেন। কিছু দিনের মধ্যে বরুণ এবং টুম্পার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। গত জুলাই মাসে বরুণের সঙ্গে তাঁর কাকদ্বীপের দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন টুম্পা। কিন্তু স্বামীর কাছে খবর ছিল না। বাপের বাড়ির কেউ কিছু জানতেন না। মেয়ের খোঁজ না পেয়ে চণ্ডীতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেন টুম্পার মা।
জানা যাচ্ছে, শ্রীমন্তের আগে টুম্পা আরও একটি বিয়ে করেছিলেন।
বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁর প্রথম পক্ষের দুই সন্তান থাকে পান্ডুয়ায়
বাপের বাড়িতে। যাই হোক, কিছু দিন পর কাকদ্বীপ থেকে পান্ডুয়ায় ফিরে যান টুম্পা।
সেখান থেকে শ্রীমন্তের কাছে চলে যান। এর মধ্যে প্রেমিকের সঙ্গে স্বামীর আলাপ করিয়ে
দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ঘটনার দিন বরুণ শ্রীমন্তকে নিয়ে এক জায়গায় মদ্যপান করেন। তার পর দু’জনে স্কুটার করে যাওয়ার সময় টুম্পাকে নিয়ে বচসা করেন। নির্জন একটি জায়গায় স্কুটার দাঁড় করিয়ে দু’জনের ঝগড়া করছিলেন। অকস্মাৎ ধারালো কিছু দিয়ে প্রেমিকার স্বামীর গলায় বসিয়ে দেন বরুণ। শ্রীমন্ত মারা গেলে তাঁর দেহ সামনের ডোবায় ফেলে দেশের বাড়ি পালিয়েছিলেন বরুণ। ধস্তাধস্তির সামনে নিজেও জখম হয়েছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন কাকদ্বীপ হাসপাতালে।
পুলিশ টুম্পাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বরুণের বিষয়টি জানতে পারে। ঠিকানা নিয়ে খোঁজখবর করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। মঙ্গলবার কাকদ্বীপ হাসপাতালে পৌঁছে যায় হুগলি গ্রামীণ পুলিশের একটি দল। হাসপাতাল থেকে অভিযুক্তকে নজরবন্দি করে আনা হয়। তার পর বিকেলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চণ্ডীতলা থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে খুনের মামলার বিস্তারিত তথ্য দেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায়। তিনি বলেন, ‘‘বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই খুন। অভিযুক্ত বরুণ হালদারের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বামীর খুনের ঘটনায় টুম্পা ক্ষেত্রপালের ভূমিকা ছিল কি না, সেটাও আমরা দেখছি। ধৃতকে শ্রীরামপুর আদালতে হাজির করে হেফাজতে চাইবে পুলিশ।’’