Howrah Businessman Kidnap And Murder Case

আগামী আটাশে বিয়ে, গত আটাশে খুন! হাওড়ার রত্ন ব্যবসায়ীকে মেরে দেহ ট্রলিতে ভরার চেষ্টায় ছিলেন খুনি

গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আক্রম। তাঁর কাছে ছিল পোখরাজ, চুনি, নীলা-সহ বেশ কিছু দামি পাথর এবং রত্ন। সব মিলিয়ে ৬০ লক্ষ টাকার জিনিস।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪৫
Share:

দেহের সঙ্গে ফ্ল্যাট থেকে মেলা দুটো ট্রলিব্যাগের একটি। —নিজস্ব চিত্র।

আগামী ২৮ অক্টোবর তাঁর বিয়ে। খুন হলেন ২৮ সেপ্টেম্বর! হাওড়ার নিখোঁজ ব্যবসায়ীর ‘রহস্যমৃত্যু’ ঘিরে নবমীর রাতে শোরগোল হুগলির চন্দননগরে।

Advertisement

বুধবার হুগলির চন্দননগরে একটি আবাসন থেকে উদ্ধার হয় ওয়াসিম আক্রম নামে বছর ত্রিশের এক যুবকের দেহ। বেশোহাটা ও লিচুতলার মধ্যবর্তী এলাকার একটি আবাসনের তিনতলার যে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ, সেই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন কাজি মহসিন। আক্রম রত্ন ব্যবসায়ী, মহসিনও তাই। ব্যবসায়িক কারণে দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল। ব্যবসার কারণেই কি শত্রুতা? উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে যায়, মৃতের হাতে-পায়ে টেপ জড়ানো। পাশেই পড়ে ছিল বড় দু’টি ট্রলিব্যাগ। তার মধ্যে একটিতে রক্তের দাগ। আক্রমের পরিবারের অভিযোগ, ব্যবসায়ীকে খুনের পর তাঁর দেহ ব্যাগে ভরে কোথাও গায়েব করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল খুনির।

Advertisement

ব্যবসায়ীর পরিবার সূত্রে খবর, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আক্রম। তাঁর কাছে ছিল পোখরাজ, চুনি, নীলা-সহ বেশ কিছু দামি পাথর এবং রত্ন। সব মিলিয়ে ৬০ লক্ষ টাকার জিনিস। চন্দননগরে কাজি মহসিনের কাছেই যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল‌েন তিনি।

মহসিনের বাড়ি ভদ্রেশ্বর খুঁড়িগাছিতে। তবে বছর দুয়েক হল সেখানে থাকেন না ওই ব্যবসায়ী। চন্দননগরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আক্রম বাড়ি থেকে বার হওয়ার অনেক পরে তাঁর ফোনে বার বার ফোন করেন পরিবারের লোকজন। পাওয়া যায়নি। চিন্তায় পড়ে যান সকলে। পরের দিন আক্রমের কয়েক জন আত্মীয় তাঁর খোঁজে চন্দননগরে যান। এমনকি, মহসিন যে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন, খোঁজ করে করে সেখানেও গিয়েছিলেন। কিন্তু ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ ছিল। আর কোনও উপায় না দেখে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায় যায় পরিবার। আক্রমকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা। পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

অন্য দিকে, ব্যবসার কারণেই মহসিনকে চেনেন শ্রীরামপুরের এক রত্ন ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে আক্রমের পরিবার। মৃত ব্যবসায়ীর দাদা বলেন, ‘‘ভাই কাজির (মহসিন) কাছে গিয়েছিল ‘স্টোন’ (পাথর) বিক্রি করতে। সে দিন রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। ওয়াসিমকে ফোন করি। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। আমাদের সন্দেহ বাড়তে থাকে। আমি কাজিকে ফোন করি। তখন সে আমাকে জানায়, আমার ভাই ওর কাছে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ গিয়েছিল। ৩০ হাজার টাকা দেয় সে। তার পর ভাই বেরিয়েও যায়।’’

আক্রমের দাদা আরও জানান, ভাইকে খোঁজাখুঁজি করতে তাঁরা চন্দননগরে গিয়ে শোনেন মহসিন তখন নদিয়ার কল্যাণীতে। পরের দিন সকালে আবার তাঁকে ফোন করা হলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমি ওকে কোনও টাকাপয়সা দিইনি। আর আমার কাছে আসেওনি।’’ কিন্তু আক্রম প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার পাথর নিয়ে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত। আক্রমের দাদা বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, এটা পরিকল্পনা করে খুন। ভাইয়ের হাতে-পায়ে টেপ জড়ানো ছিল। ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পনামাফিক খুন করেছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত।’’

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকের অভিযোগ, ধৃত মহসিন তাঁদের অনেককে ঠকিয়েছেন। কারও কাছে রত্ন বা পাথর নিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেননি। এমনকি, এক জনকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁর ব্যাগ ছিনতাই করেন। কাজির বাড়ি যেখানে সেই খুঁড়িগাছির তাঁর প্রতিবেশীরাও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার প্রসঙ্গে ডিসিপি চন্দননগর অলকানন্দা ভাওয়াল বলেন, ‘‘চন্দননগরের একটি আবাসন থেকে এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের গোলাবাড়ি থানার পুলিশ তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত করছিল। চন্দননগর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement