Cyclone Amphan

ভেঙেছে ঘরদোর, ঝড়ে ফের বিপর্যয় দুই জেলায়

কলিমুদ্দিন কলকাতায় শাড়িতে ছাপার কাজ করতেন। মন্দার জেরে বছর তিনেক আগে ফিরে আসেন।

Advertisement

নুরুল আবসার ও পীযূষ নন্দী

উলুবেড়িয়া ও আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০১:২৮
Share:

গাছ পড়ে ভেঙেছে টিনের ছাউনি। আরামবাগের পার্বতীচকে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

এক সপ্তাহ আগে আমপানের তাণ্ডবে উড়েছিল শেখ কলিমুদ্দিনের ঘরের চালের টালি। সেই ফাঁক কলিমুদ্দিন ঢেকেছিলেন ত্রিপল দিয়ে। বুধবার কালবৈশাখী এসে সেই ত্রিপলও উড়িয়ে নিয়ে গেল। উড়ে যাওয়া ত্রিপল কুড়িয়ে এনেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তা টানটান করে বেঁধে দিয়েছেন কুঁড়েঘরের চালে।

Advertisement

৬৩ বছরের কলিমুদ্দিনের বাড়ি আমতা-২ ব্লকের চিৎনান শেখপাড়ায়। তাঁর পরিবারে আছেন স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই বৌমা এবং নাতি-নাতনিরা। তিনি যেখানে থাকেন সেটিকে অবশ্য ঘর বলা যায় না। ছিটেবেড়ার দু’কামরার কুঁড়েঘর।

কলিমুদ্দিন কলকাতায় শাড়িতে ছাপার কাজ করতেন। মন্দার জেরে বছর তিনেক আগে ফিরে আসেন। এখন চা বিক্রি করেন। ছেলেরা দিনমজুর। তাঁর কথায়, ‘‘এই রোজগারে পাকা বাড়ি করা যায় না। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির অনুদানও মেলেনি। লকডাউনে চায়ের দোকান বন্ধ। ছেলেদের রোজগার অনিয়মিত। এখন টালি কেনা সম্ভব নয়। তাই ত্রিপলই ভরসা।’’

Advertisement

স্থানীয় ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে, বুথপ্রতি ১০টি করে ত্রিপল এসেছে। তাই, সবাইকে দেওয়া যায়নি। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘পরিবারটির জন্য কী করা যায়, দেখছি।’’ সব ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রিপলের দাবি জানান তিনি।

ঝড়ে জেলার অন্যত্রও ক্ষতি হয়েছে। কালবৈশাখী বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, জগৎবল্লভপুর, সাঁকরাইল, বাউড়িয়া, পাঁচলা প্রভৃতি এলাকার উপর দিয়েও বয়ে যায়। আমপানে যাঁদের বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে, তাঁরা বেশি বিপাকে পড়েন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, আমপানে যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

কালবৈশাখীর হানায় বিপর্যস্ত হয়েছে হুগলির আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকাও। দ্বারকেশ্বর নদীর ধারে সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের পার্বতীচক গ্রামে ২৫টি ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। অ্যাসবেসটস নষ্ট হয়েছে। লালু মুর্মু নামে এক গ্রামবাসীর খেদ, “এক বিঘা জমি ভাগে নিয়ে তরমুজ চাষ করেছিলাম। আমপানে পুরোটাই নষ্ট হয়েছে। এ বার ঝড়ে ঘরের চালের অ্যাসবেসটসটাও গেল।’’ পড়শি ফেলু মান্ডির কথায়, “লকডাউন, আমপান, কালবৈশাখী মিলে আমাদের বিপর্যস্ত করে ছাড়ল। ত্রাণের জন্য হাত পাততে হবে। কিন্তু কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেননি।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাজি বলেন, “আপাতত খান ছ’য়েক ত্রিপল এবং রেশনের চাল দেওয়া হয়েছে। ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েতের তরফে অন্যান্য ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” কালবৈশাখীতে আরামবাগ শহরে বেশ কিছু গাছ উপড়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। তার ফলে অনেক জায়গা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রের খবর, আরামবাগ ডিভিশনে মোট ১৫০টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬০টি মেরামত করা গিয়েছে।

বুধবারের ঝড়ে বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া ১ ও ২ পঞ্চায়েতে বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। তার জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। বলাগড় বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানার দাবি, দ্রুতগতিতে মেরামতের কাজ চলছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝড়ে কুড়িটিরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন