সোনম ওয়াংচুক। শনিবার শহরে। ছবি: শৌভিক দে।
দু’টো তারিখের সঙ্গেই জুড়ে গেল সেপ্টেম্বর। মিশল সিনেমা আর বাস্তব। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ র্যাঞ্চোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল চতুর। বলেছিল, দশ বছর পরে সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখে দেখা হবে। সে দিন দেখা যাবে, কে বেশি সফল। আসেনি র্যাঞ্চো। সুদূর লাদাখে স্বপ্নের দুনিয়ায় থাকা র্যাঞ্চোকে খুঁজে নিয়েছিল ফারহান আর রাজু। শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর কিন্তু নিজেই কলকাতায় চলে এলেন বাস্তবের র্যাঞ্চো— সোনম ওয়াংচুক। সৌজন্যে সিআইআই এবং ইয়ং ইন্ডিয়ান্স, কলকাতা।
সিনেমার র্যাঞ্চোর সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারেন না সোনম। বলেন, ‘‘আমি ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নই। পাঁচ ঘর মানুষ থাকা লাদাখের এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম আমার।’’ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়েই সোনম দেখেছিলেন, সেখানে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশের হার বড়জোর পাঁচ শতাংশ। বদলের রোখ চাপে তখনই। ১৯৮৮ সালে তৈরি করেন ‘স্টু়ডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ (সেকমল)। যেখানে পড়ুয়ারা বেড়ে উঠছে মনের আনন্দে।
ফিল্মের র্যাঞ্চোর স্কুলে পা দিয়েই ফারহান-রাজু দেখেছিল, স্কুটারে একটা যন্ত্র বসিয়ে তৈরি হয়েছে গম ভাঙার বন্দোবস্ত। সাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে ছাঁটা হচ্ছে ভেড়ার লোম। আর মাস্টারমশাই খেলনা এরোপ্লেন ওড়াচ্ছেন। সোনমের ‘সেকমল’-এর পড়ুয়ারা বছরখানেক আগেই তৈরি করেছে ‘আইস স্তূপ’। শঙ্কু-আকৃতির একটা ব্যাপার। গ্রীষ্মে যেখান থেকে বরফ-গলা জল পৌঁছে যাচ্ছে চাষের জমিতে। গোটাটাই জলের স্বাভাবিক ধর্ম আর মাধ্যাকর্ষণকে মাথায় রেখে তৈরি। বা শীতে সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে ক্লাসরুম গরম রাখার অভিনব ব্যবস্থা। স্যারেরা শুধু ভাবনাটা উস্কে দেন। বাকিটা কিন্তু করে পড়ুয়ারাই— যারা স্কুলছুট অথবা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে এক দিন সবার পিছনে ছিল।
আরও পড়ুন:গেরুয়া শিবিরের অস্ত্র বিবেকানন্দও
সোনমের রাজ্য শেখায় তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে বাঁচতে— মস্তিষ্ক-হৃদয়-হাত। উপভোগ করতে বলে প্রতিটি মুহূর্ত। সেটাই বড় সমস্যার সমাধানের মন্ত্র— ‘অল ইজ ওয়েল’। সোনম স্বপ্ন দেখেন, দুনিয়াটাই বদলাক এ ভাবে। লাদাখে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। যেখানে ব্যর্থতার মোড়কে চাপা পড়ে থাকা ভিনদেশি ছাত্ররা এসে জীবনের জ্ঞান ও বিজ্ঞান মিলিয়ে নানা সমস্যার সহজ সমাধান করতে শিখবে।
সরাসরি না হলেও সোনমের কথায় উঠে এল সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। যেমন বললেন, ‘‘ধর্ম যদি রোজকার জীবনকে খানিকটা শৃঙ্খলায় বাঁধতে পারত, বেশ হতো!’’ সেটা কেমন? সোনমের ব্যাখ্যা, ‘‘ধরা যাক, ধর্মে বলা থাকল সব সময়ে লিফ্টে চড়া যাবে না। তাতে যন্ত্র-নির্ভরতা কমত। শরীরটাও সচল থাকত। অথচ ধর্ম সেই সব ইতিবাচক বিষয়ে খুব বেশি কথা বলে না।’’
সোনমের এক-একটা কথায় হাততালিতে ফেটে পড়েছে প্রেক্ষাগৃহ। স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা মুগ্ধ বিস্ময়ে বলেছে, ‘‘এ ভাবেও বড় হওয়া যায়!’’