Heatwave

বঙ্গে ‘সাহারার শিহরণ’! কেন রাজস্থানকেও গরমে পিছনে ফেলছে বাংলা? অন্যতম কারণ সাহারাও

আগামী বুধবার পর্যন্ত রাজ্যের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সম্ভাবনা নেই বৃষ্টির। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে শুষ্ক পশ্চিমা বায়ু। সেই বাতাস আসছে সাহারা থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৯
Share:

গরম থেকে আপাতত স্বস্তি নেই রাজ্যে। স্বস্তি শুধু পাহাড়ে। — ফাইল চিত্র।

জটায়ু থাকলে নির্ঘাৎ তাঁর উপন্যাসের নাম বদলে করতেন ‘সাহারার শিহরণ’!

Advertisement

আদত উপন্যাসের নাম ‘সাহারায় শিহরণ’। অর্থাৎ, সাহারা মরুভূমিতে বিচরণের শিহরণ। সাহারা মরুভূমি আফ্রিকায়। কিন্তু খানিক ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে আমরা ‘সাহারা’ নামটুকু বদলে থর মরুভূমি করতে পারি। যে থর মরুভূমির দেশের অনেক শহর এখন তাপমাত্রায় পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের থেকে। শনিবার বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ ডিগ্রির উপরে। শহর কলকাতায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সামান্য বেশি। কলাইকুন্ডায় ৪৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে থর মরুভূমির দেশ রাজস্থানের কয়েকটি জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুরবেলা কলকাতায় গড়ের মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটলে টের পাওয়া যাচ্ছে শিহরণ! পানাগড়, বাঁকুড়া বা মেদিনীপুরে গেলে আরও বেশি অনুভব করা যাচ্ছে। তবে এ সবের নেপথ্যে সাহারা মরুভূমিকেই দায়ী করছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, এখনই পারদ নীচে নামার কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে তাপমাত্রা। সঙ্গে চলবে তাপপ্রবাহ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে শুষ্ক পশ্চিমা বায়ু। আর সেই বাতাস আসছে সাহারা থেকে। সে কারণেই ঊর্ধ্বমুখী পারদ।

Advertisement

কিন্তু এই পশ্চিমা বায়ু তো রাজস্থানেও ঢুকছে। সেখানে কেন তা হলে বৃদ্ধি পাচ্ছে না তাপমাত্রা? আবহবিদেরা বলছেন, সাহারা থেকে উষ্ণ বায়ু রাজস্থানে ঢুকলেও সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। রাজস্থানে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় রয়েছে। সে কারণে সব সময় কিছু না কিছু হচ্ছেই। কখনও বৃষ্টি, কখনও ঝোড়ো হাওয়া। সেই কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারছে না। তাপ ছেড়ে দিতে পারছে মাটি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও তা আবার কমে যাচ্ছে। একটানা গরম থাকছে না রাজস্থানে। সুদূর পশ্চিম থেকে আসা সেই বাতাস এর পর ক্রমে এগোচ্ছে পূর্বের দিকে। যেখান দিয়ে এগোচ্ছে, সেখানেও কিন্তু ঠান্ডা নেই। তীব্র গরম। মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহারের উপর দিয়ে এসে ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গে।

আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজস্থানে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা সক্রিয় থাকলেও বঙ্গোপসাগরে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে না। এই বিপরীত ঘূর্ণাবর্তই আর্দ্রতা আনে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পর তৈরি হয় কালবৈশাখী ঝড়। এখন বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেও বাংলাদেশের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে কালবৈশাখী বঙ্গে অধরাই থাকছে। কালবৈশাখী হলে রাত একটু স্বস্তিদায়ক হয়। তা না-হওয়ায় টানা গরমের কারণে মাটি তেতে যাচ্ছে। তার ফলে স্বস্তি মিলছে না। শুক্রবার তাপমাত্রা দক্ষিণবঙ্গে সামান্য কমেছিল। কারণ, রাজ্যের একেবারে দক্ষিণ অংশে আর্দ্রতা বেশি ছিল। ফলে গরম হাওয়া (শুষ্ক পশ্চিমা বায়ু)-কে ঠেলে সে উত্তরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সে কারণে শুক্রবার তুলনামূলক গরম বেশি ছিল রাজ্যের মধ্য এবং উত্তর ভাগে।

শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তার পরেই ছিল পানাগড়। সেখানে দিনের তাপমাত্রা ৪৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। স্বাভাবিকের থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সেখানে শুক্রবার রাজস্থানের গঙ্গানগরে দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের নিরিখে এই গঙ্গানগর দেশে প্রায়ই শীর্ষস্থান অধিকার করে। শুক্রবার রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম, ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জোধপুরে ছিল ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খোদ মরুভূমির এলাকা জয়সলমেরে তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে শুক্রবার কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হাওয়া অফিস বলছে, এপ্রিলে কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যে হয় না, এমনটা নয়। ২০১১ সাল থেকে তিন বার এপ্রিল মাসে কলকাতার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়িয়েছিল। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসও প্রায়ই হয়। দীর্ঘ সময় ধরে গরমেও হাঁসফাঁস করেছে শহর।

তা হলে এ বার এত কষ্ট কেন? আলিপুর হাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি হচ্ছে না বলেই গরম অসহ্য হয়ে উঠেছে। দিনে তো স্বস্তি নেই, রাতেও অস্বস্তি। এমনকি, স্বস্তি মিলছে না স্নান করলেও। কল খুললেই জল যেন আগুন।

রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলো আগেই ছুটি দিয়েছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি স্কুল ক্লাস নিচ্ছে অনলাইনে। কোনও স্কুল আবার বসছে সকালে। বেলার দিকে অফিসের পথে পা বাড়িয়ে বঙ্গবাসীর সুখ নেই। বেলা বাড়লে রাস্তায় ফেরিওয়ালার দেখা মিলছে না। রাত ১২টায় রিকশা মিললেও দুপুর ২টোয় বেরোলে বঙ্গবাসীর ভরসা ‘এগারো নম্বর বাস’ অর্থাৎ হাঁটা। দুপুরে কলকাতার রাস্তায় অমিল অ্যাপ ক্যাবও। যে ক’টা রাস্তায় চলে, তাতে ওঠার জন্য পকেটে রেস্ত থাকে না বেশির ভাগেরই। ‘সার্জ প্রাইস’ দুপুর ১২টার পর থেকেই ঊর্ধ্বগামী। এমনি সময়ে যে দূরত্বের ভাড়া ১২০ টাকা, দুপুর ২টোয় তা হয়ে যায় ৩৭৫ টাকা।

এ সব দেখে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানাবিধ টিপ্পনী। কেউ লিখেছেন, ‘কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে এখন আর সকাল হয় না। রাতের পরেই দুপুর।’ বাংলা সিনেমার গান মনে করিয়ে দিয়ে কেউ আবার লিখেছেন, ‘স্নানের জলে বাষ্পে ভাসো!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন