গাফিলতির তিরে এ বার বিদ্ধ ফর্টিস হাসপাতাল

এক রোগিণীর মৃত্যুকে ঘিরে ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল শহরের আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। শুধু গাফিলতিই নয়, ওই রোগিণীর পরিবারের অভিযোগ, সাধারণ একটি অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হলেও রোগিণীর মৃত্যুর পরে তাঁদের হাতে বিপুল অঙ্কের একটি বিল ধরিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৬
Share:

অদিতি ঘোষ সরকার

এক রোগিণীর মৃত্যুকে ঘিরে ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল শহরের আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। শুধু গাফিলতিই নয়, ওই রোগিণীর পরিবারের অভিযোগ, সাধারণ একটি অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হলেও রোগিণীর মৃত্যুর পরে তাঁদের হাতে বিপুল অঙ্কের একটি বিল ধরিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের ডেকে সতর্ক করার সময়ে প্যাকেজের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গটিও তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দিন দুয়েক আগেই চার মাসের একটি শিশু মারা যাওয়ার পরে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল বাইপাস স‌ংলগ্ন অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ বারের ঘটনাস্থল, আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতাল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে আনন্দপুর থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন মৌড়িগ্রামের বাসিন্দা অদিতি ঘোষ সরকারের (৩২) পরিবার। তখন অদিতি হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, অদিতি মারা গিয়েছেন।

Advertisement

এ দিন মৃতার স্বামী অনুপম সরকার জানান, গত ১ মার্চ পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন অদিতি। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষার পরে ৩ মার্চ তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। ৫ মার্চ থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অদিতি। তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল ১২। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে তা কমে দাঁড়ায় ৩.৮। কিন্তু কেন এমন হল, সেই প্রশ্নের উত্তর দেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনুপম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখা হয়েছিল, কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। ফি-দিন বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা চলেছে। কিন্তু কী অসুস্থতা, সে কথা আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করছিল না হাসপাতাল। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। তার পরেই হাসপাতাল জানিয়ে দিল, আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন:১০ লক্ষ টাকার থার্মোকল জলে

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পিত্তথলির পাথরের অস্ত্রোপচারের জন্য এক লক্ষ ৭৩ হাজার টাকার প্যাকেজে অদিতি ভর্তি হন। কিন্তু এ দিন বিল দেখানো হয়েছে, ৩০ লক্ষ টাকা!

সম্প্রতি হাসপাতাল-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে প্যাকেজে রোগীকে ভর্তি করা হবে, তার মধ্যেই চিকিৎসা করতে হবে। রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছা়ড়ার সময়ে প্যাকেজ-বহির্ভূত বিল করা যাবে না। তা সত্ত্বেও কেন অদিতির পরিবারকে অতিরিক্ত বিল মেটাতে হচ্ছে? হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, রোগীর অস্ত্রোপচারের প্যাকেজ ছিল। কিন্তু তার পরেও তাঁর নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলির চিকিৎসা করা হয়। তাই প্যাকেজের বাইরেও অতিরিক্ত বিল হয়েছে।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলেন, পিত্তথলির পাথরের অস্ত্রোপচার করতে এলেও অদিতির অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা ছিল। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন
তাঁকে বাঁচানোর।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, অভিযোগ জানালে খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন