এক ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়াল বিধাননগর পুর নিগমের এক কাউন্সিলর-সহ কয়েক জনের। বাগুইআটির জ্যাংড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীকে রবিবার গভীর রাতে ও সোমবার দুপুরে দু’দফায় মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই ব্যবসায়ী বুধবার দুপুরে বাগুইআটি থানায় কাউন্সিলর-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যবসায়ীর নাম অনুপকুমার গুপ্ত। আর অভিযুক্ত কাউন্সিলর হলেন সুজিত মণ্ডল। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে কেউ গ্রেফতার হননি।
বিধাননগর পুর নিগমের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুজিত মণ্ডল। অভিযোগ, সুজিতবাবুর মদতেই তাঁর লোকজন কেব্ল চ্যানেলের ব্যবসায়ী অনুপবাবুকে মারধর করেছেন। অনুপবাবু জানান, মারের চোটে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর পাঁজরে, কপালে আঘাত লাগে। চোখ ফুলে যায়।
অনুপবাবু জানান, অষ্টমীর দিন গভীর রাতে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে নিজের গাড়িতে চেপে ঠাকুর দেখে ফিরছিলেন। চালকের পাশের আসনে তিনি বসেছিলেন। অনুপবাবুর অভিযোগ, ‘‘যাঁরা আমায় মেরেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই কাউন্সিলরের লোক। আমি বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় আমার গাড়ি ঘিরে কয়েক জন জানাল, সামনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আমি গাড়ি ছাড়তে রাজি হইনি। কারণ গাড়িতে আমার পরিবারের লোকজন ছিল। এর পরেই আমায় মারধর করা শুরু হয়।’’ স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে ওই ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
অনুপবাবু জানান, ওই রাতে প্রথমে তাঁকে এক দফা মারধর করা হয়। পরের দিন নবমীর দুপুরে তিনি নিজের অফিসে বসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অফিসে এসে কয়েক জন কাউন্সিলর সুজিত মণ্ডলের নাম করে তাঁর অফিসে দেখা করতে বলেন। একটু সময় চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। আমাকে অফিস থেকে মারতে মারতে বার করে কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ অনুপবাবুর দাবি, কাউন্সিলরের সামনে মেরে তাঁর মুখ-চোখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তবে কাউন্সিলর তাঁর গায়ে হাত তোলেননি।
স্থানীয় সূত্রে অবশ্য খবর, যে দুর্ঘটনার কথা ওই ব্যবসায়ীকে জানানো হয়েছিল সেটি ঘটেছিল কাউন্সিলর সুজিতবাবুর সঙ্গেই। সুজিতবাবুর স্কুটিকে একটি বাইক ধাক্কা মেরে পালায়। সেই ঘটনাকে ঘিরেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। ইতিমধ্যেই ওই জায়গায় অনুপবাবুর গাড়ি ঢোকে।
কাউন্সিলর সুজিতবাবু তাঁর স্কুটি দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করলেও অনুপবাবুর মার খাওয়ার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছেন। সুজিতবাবু ওই ব্যবসায়ীর সব অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেন, ওই ব্যবসায়ীর গাড়িতে পাড়ার একটি ছেলের দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা ওই ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেছিলাম ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। আর চিকিৎসার খরচ দিতে। কিন্তু উনি রাজি হননি।
সুজিতবাবুর দাবি, ‘‘ওই ব্যবসায়ীকে আহতের পরিজনেরাই মারধর করেছেন। আমার অফিসে ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম দু’পক্ষের মধ্যে কথা বলানোর জন্য। কিন্তু তার আগেই আহত ছেলেটির পরিচিতেরা ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করেন।’’
কিন্তু দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে কেন পুলিশের কাছে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করানো হল না?
কাউন্সিলরের সাফাই, ‘‘দু’পক্ষই পাড়ার বাসিন্দা। ভেবেছিলাম বিষয়টি মিটে যাবে। কিন্তু এ বার যে ছেলেটি ওই ব্যবসায়ীর গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছিল তাঁকেও পুলিশের কাছে যেতে বলেছি।’’ যদিও অনুপকুমার গুপ্তের পাল্টা দাবি, ‘‘কাউন্সিলর মিথ্যে বলছেন। আমার গাড়িতে কারও দুর্ঘটনা ঘটেনি।’’