টোটো নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় টিঙ্কু চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র
যাত্রী নামানো হলেই দশটা সংখ্যা গড়গড় করে বলে দেবেন তিনি। ‘‘সকাল-দুপুর, রাত-বিরেতে যখনই জরুরি দরকার হবে, আমাকে খবর দেবেন। পৌঁছে যাব। এটা আমার ফোন নম্বর।’’ গন্তব্যে পৌঁছে যাত্রী যদি ভাড়া দিতে পকেটে হাত ঢোকান, কড়া প্রত্যাখ্যান তাঁর প্রাপ্য। ‘‘পয়সা নেওয়ার হলে এখন বেরোতাম না!’’
নিজের রোজগার বলতে ওই টোটোই। লকডাউনের মধ্যে তাঁর সেই বাহন নিয়েই নিখরচায় জরুরি পরিষেবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভা এলাকার টিঙ্কু চক্রবর্তী। টোটোর সামনে উইন্ডস্ক্রিনে জরুরি মেডিক্যাল পরিষেবার স্টিকার লাগানো। অসুস্থকে নিয়ে ডাক্তার-হাসপাতাল বা ওষুধের খোঁজে বেরোনো মানুষই টিঙ্কুর টোটোয় অগ্রাধিকার। অন্য জরুরি প্রয়োজনেও দৌড়চ্ছে তাঁর টোটো। এবং সবই বিনা ভাড়ায়।
পলতার আমবাগান কলোনির বাসিন্দা টিঙ্কু বলছেন, ‘‘আমার কাছে পয়সা নেই, ঠিক কথা। কিন্তু এই সময়ে জরুরি কাজে যাঁরা বেরোচ্ছেন, তাঁরা গাড়ি-ঘোড়া পাচ্ছেন না। পেলেও গাড়ি অনেক টাকা চাইছে। আমি চেষ্টা করছি, জরুরি কাজে মানুষকে যদি একটু সাহায্য করা যায়।’’ সকাল হোক বা মধ্যরাত, ফোনে ডাক পেলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন মধ্যবয়সী চালক। পথে বিপন্ন মানুষ পেলেও সহায়তা দিতে তিনি তৈরি। তাঁর মন্ত্র, মানুষ সুস্থ জীবনে ফিরতে পারলে ভাড়া তিনি অনেক পাবেন।
কিন্তু দাবি না করেও তো ইচ্ছুক যাত্রীর কাছে ভাড়া নেওয়া যায়? টিঙ্কুর জবাব, ‘‘দরকার নেই! ওই টাকাটা অন্য কোনও জরুরি প্রয়োজনে তো মানুষের কাজে লাগতে পারে।’’ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোনো মানুষ যে যেমন মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছেন, সেটাই আপাতত উপার্জন টোটো চালকের। নিজের আয় বাজি রেখেই!
আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে আতঙ্ক নয়, বলছেন বিজয়ীরা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)