ভিড়ে এসি রেক নিয়ে আতঙ্কে যাত্রীরা

বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। বার বার চোখের উপরে সেই দৃশ্য ভেসে উঠছে। সোমবার থেকে ফের অফিস শুরু হবে। আর এসি মেট্রোয় উঠব না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

ফাঁকা: শনিবারই ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তার পরেও রবিবার সকালে পার্ক স্ট্রিটের প্ল্যাটফর্মে দেখা মিলল না নিরাপত্তারক্ষীর। টালিগঞ্জে দাঁড়িয়ে সেই ট্রেন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য, দীক্ষা ভুঁইয়া

শহরের বুকে এসি মেট্রো যেন আতঙ্কের অন্য নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার হাত আটকে এক যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা কেউ প্রত্যক্ষ করেছেন সরাসরি সেই ট্রেনের যাত্রী হিসেবে। কেউ আবার টেলিভিশনে সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছেন। তার জেরে সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিন থেকে অনেক যাত্রীই চাইছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রো এড়িয়ে যেতে।

Advertisement

ঠিক যেমন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্বজিৎ দেখেছিলেন কী ভাবে দরজায় হাত আটকে যাওয়ার পরে চলন্ত ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছিলেন যাত্রী সজল কাঞ্জিলাল। তার পরে কী ভাবে সজলবাবু ছিটকে পড়ে মারা যান— সবটাই নিজের চোখে দেখেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী বিশ্বজিৎ। মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে যতীন দাস পার্কে যাওয়ার জন্য ওই মেট্রোতে উঠেছিলেন বিশ্বজিৎ। তিনি ছিলেন তিন নম্বর কামরার তিন নম্বর দরজার পাশেই। যে দরজা দিয়ে উঠতে গিয়েই হাত আটকে যায় সজলবাবুর।

বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। বার বার চোখের উপরে সেই দৃশ্য ভেসে উঠছে। সোমবার থেকে ফের অফিস শুরু হবে। আর এসি মেট্রোয় উঠব না।’’ তিনি জানান, শনিবারের ঘটনার পরে ট্রেনটি ফের পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ফেরত এলেও প্রায় ২০ মিনিট দরজা খোলেনি। এসি বন্ধ ছিল। সঙ্গে পোড়া গন্ধ। সেই বিভীষিকা এদিনও তাড়া করছে তাঁকে।

Advertisement

আগুন লাগায় গত বছর ময়দান স্টেশনে ঢোকার আগে একটি এসি মেট্রো সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়েছিল। এসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম হয় যাত্রীদের। জানলার কাচ ভেঙে সড়ঙ্গে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। তবে শনিবারের ঘটনা যেন সব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে।

রবিবার দুপুরে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের বাইরে মেট্রোযাত্রী ঋতুরাই ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভয় তো লাগছে ঠিকই। কিন্তু কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে মেট্রো ছাড়া উপায় কী?’’ শনিবারের ঘটনার পরে ভিড়ের সময়ে এসি মেট্রোতে চড়া নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন অনেকেই। শ্যামবাজারের বাসিন্দা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার

শ্যামবাজার থেকে টালিগঞ্জ যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অফিস দিনে ভিড় ট্রেনে উঠতে গেলে দরজার কাছে দাঁড়ানো লোকজনকে ঠেলেই উঠতে হয়। অনেক সময়েই ব্যাগ দরজার বাইরে আটকে থাকে। দরজার সেন্সর কাজ না করলে তো বিপদ হতে পারে।’’

রবিবার ফাঁকা মেট্রোয় চড়া কয়েক জন যাত্রী জানান, শনিবারের ঘটনা তাঁদের মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এমনিতে রবিবার ভিড় কম থাকে। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে দাঁড়ানো এক যাত্রীর কথায়, ‘‘কেন জানি না মনে হচ্ছে আজ যেন ট্রেনগুলি একটু বেশিই ফাঁকা। পার্ক স্ট্রিট স্টেশনও যেন ধূ-ধূ করছে।’’ ওই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনেও এ দিন দেখা মিলন না আরপিএফের। তবে অন্য স্টেশনগুলিতে প্ল্যাটফর্মের প্রথম এবং শেষের দিকে আরপিএফের দেখা মিলেছে।

এ দিন দুপুরে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের আপ লাইনে কড়া পাহারায় দাঁড় করানো ছিল শনিবারের সেই অভিশপ্ত রেকটি। সেটির দিকে তাকিয়ে আরপিএফদের কাছে যাত্রীদের প্রশ্ন করতে দেখা যায়, ‘‘এটাই শনিবারের ট্রেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন