tangra

নিহতের বয়ানকেই ট্যাংরাকাণ্ডে হাতিয়ার করতে চাইছে পুলিশ

বুধবার সন্ধ্যাতেই ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক আব্দুর রহমান এবং তার সহকারী তাজউদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় ওই অ্যাম্বুল্যান্সটিকেও। পুলিশের তরফে জানানো হয়, সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্সটি শনাক্ত করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:১৭
Share:

ঘাতক অ্যাম্বুল্যান্স (বা দিকে) এবং গোবিন্দ খটিক রোডে এই জায়গাতেই অ্যাম্বুল্যান্সটি ধাক্কা মারে প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ ১: অ্যাম্বুল্যান্স থেকে হাত ধরে টেনে বধূ অপহরণের চেষ্টা।

Advertisement

অভিযোগ ২: অপহরণ ঠেকাতে গিয়ে ওই গাড়িই পিষে দিয়েছে বধূর শ্বশুরকে। তার জেরে মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের।

অভিযোগ ৩: অপহরণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে গোটা বিষয়টাকে দুর্ঘটনার তত্ত্বে মুড়তে চাইছে পুলিশ। তাদের তদন্তে গাফিলতি রয়েছে।

Advertisement

এই তিন অভিযোগেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ট্যাংরা। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে প্রৌঢ়ের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি।

চিকিৎসকের সামনে প্রৌঢ়ের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি- নিজস্ব চিত্র।

বুধবার সন্ধ্যাতেই ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক আব্দুর রহমান এবং তার সহকারী তাজউদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় ওই অ্যাম্বুল্যান্সটিকেও। পুলিশের তরফে জানানো হয়, সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্সটি শনাক্ত করা হয়। বুধবার বিকেলের মধ্যেই তার হদিশ পাওয়া যায় মহেশতলা এলাকায়। সেই সঙ্গে তদন্তকারীরা জানান, ওই ফুটেজে কোথাও এমন কোনও ছবি মেলেনি যা, মৃতের পুত্রবধূর দাবিকে সমর্থন করে।

অর্থাৎ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অ্যাম্বুল্যান্স দেখা গেলেও, কোথাও এমনটা দেখা যায়নি, ওই গাড়িটি গোবিন্দ খটিক রোডে দাঁড় করিয়ে কোনও মহিলাকে জোর করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও মৃতের পুত্রবধূ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন যে, ওই অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়। এবং সেই সময়ে তাঁর শ্বশুর বাধা দিতে গেলে তাঁকে ধাক্কা মেরে টেনে হিঁচড়ে এগিয়ে যায় গাড়িটি।

আরও পড়ুন: ট্যাংরা কাণ্ডে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে, মানতে চাইছে না পুলিশ!

এ দিন সকাল থেকেই ট্যাংরা থানার সামনে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কিন্তু তদন্তকারীদের দাবি, তদন্তে কোনও গাফিলতি হচ্ছে না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে প্রৌঢ়ের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি— কোনও কিছুই অপহরণের দাবিকে সমর্থন করছে না।

পুলিশ সূত্রে খবর, গুরুতর আহত অবস্থায় ওই প্রৌঢ়কে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার এমএসএমএস ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার অনির্বাণ দাসের সামনে বয়ানও দেন ওই প্রৌঢ়। সেই জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি,২০২০) রাত ১১টা ৫০ থেকে ১১টা ৫৫-র মধ্যে গোবিন্দ খটিক রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটি সাদা রঙের অ্যাম্বুল্যান্স আচমকাই তাঁকে ধাক্কা মেরে কিছুটা দূর পর্যন্ত হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এর পর গাড়িটি পালিয়ে যায়। ডান পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর।”

আরও পড়ুন: বিয়ের রাতে অঘটন, মেসোর মৃত্যু মানতেই পারছেন না নবদম্পতি

এই জবানবন্দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। এক পুলিশ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘গোটা জবানবন্দিতে কোথাও তিনি অপহরণের চেষ্টা বা অ্যাম্বুল্যান্স চালককে বাধা দেওয়ার কথা এক বারও উল্লেখ করেননি। মৃতের জবানবন্দি অনুযায়ী গোটাটাই একটি দুর্ঘটনা।’’ অন্য এক তদন্তকারীও বলেন, ‘‘যদি ওই রকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকত, তবে তিনি নিশ্চয়ই উল্লেখ করতেন।”

তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতদের জেরা করেও ওই রকম কোনও ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মৃতের জবানবন্দি এবং ধৃতদের বয়ান কোনওটাই মৃতের পুত্রবধূর বয়ান সমর্থন করছে না বলেই জানান এক তদন্তকারী। কিন্তু তার পরেও আরও নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এ দিন ট্যাংরায় ওই অ্যাম্বুলেন্স এবং ঘটনাস্থল পরীক্ষা করতে গিয়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করেই এফআইআর করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন