‘ছেলের যেন ক্ষতি না হয়’, বলছেন অশীতিপর মা

গত সোমবার মাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে কালিকাপুরে শ্যালিকার বাড়িতে জামাইষষ্ঠী করতে গিয়েছিলেন ছোট ছেলে ভবনাথ দাস।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০২:৫০
Share:

অমানবিক: হাসপাতালে শোভারানি দাস।

কোন‌ও ভাবেই ছোট ছেলের বাড়িতে ফিরে যেতে চান না তিন দিন গৃহবন্দি হয়ে থাকা মা। শুক্রবার দমদম পুর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বছর আশির শোভারানি দাস বললেন, “বড় ছেলে বা মেয়ে রাখতে চাইলে থাকব। অন্য কোথাও গিয়ে থাকব তাও ভাল। কিন্তু ছোটর কাছে যাব না।”

Advertisement

গত সোমবার মাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে কালিকাপুরে শ্যালিকার বাড়িতে জামাইষষ্ঠী করতে গিয়েছিলেন ছোট ছেলে ভবনাথ দাস। সঙ্গে বৌমা শ্যামলী দাস। বৃদ্ধার অভিযোগ, ভাত চেয়েও ছেলের কাছে পাননি। তিন দিনের খাবার বলতে তাঁর জন্য রেখে যাওয়া হয়েছিল শুধুই চারটি বিস্কুট আর এক বোতল জল! মা যে এই অবস্থায় বাড়ির মধ্যে রয়েছেন, তা প্রতিবেশীরা যাতে জানতে না পারেন, সে জন্য দরজায় তালা দেওয়ার পাশাপাশি একটি জানলা ভিতর থেকে চেন, তালা দিয়ে লাগানো ছিল বলেও অভিযোগ। আর একটি জানলা কাঠের বিম দিয়ে সিল করেছিলেন ছেলে। বৃদ্ধার কান্নার শব্দে প্রতিবেশীরা বুধবার রাতে তালা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করেন। এই ঘটনার পর থেকে প্রতিবেশীরা ভবনাথ এবং তাঁর স্ত্রীর উপরে ক্ষুব্ধ। এ দিন শোভারানি অভিযোগ করেন, “ছোট ছেলের বৌ গালাগালি করে, মারধর করে।’’ সে কারণেই ছোট ছেলের কাছে কোনও ভাবেই তিনি আর থাকতে চান না বলে জানান বৃদ্ধা মা।

মায়ের বক্তব্য প্রস‌ঙ্গে বড় ছেলে জগন্নাথ দাস জানান, মা নিজের ইচ্ছে মতো তাঁর কাছে কিংবা বোন পদ্মরানি বিশ্বাসের কাছে থাকবেন। কিন্তু মায়ের উপরে অত্যাচারের জন্য ভাই এবং তাঁর বৌ যাতে উপযুক্ত শিক্ষা পান, সে বিষয়েও ত‍‌ৎপর জগন্নাথবাবু। এ ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ধন‌ঞ্জয় মজুমদারের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। তবে এত দিন কেন তিনি মায়ের দায়িত্ব নেননি, তার সদুত্তর মেলেনি বড় ছেলের কাছে। এ দিকে, এ দিন ধনঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘বৃদ্ধা যাতে শান্তিতে থাকতে পারেন, চিকিৎসায় যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, সেই চেষ্টা করব।’’ পেশায় অটোচালক ভবনাথকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে কয়েক দিনের জন্য তাঁকে বসিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন রুটের সহকর্মীরা। এ দিন রুট থেকে কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করলে অটো ইউনিয়নের নেতাদের বক্তব্য লিখিত আকারে জানাতে বলেছেন ধনঞ্জয়বাবু।

Advertisement

এ দিন ভবনাথের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং মায়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে পরে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে খুবই অন্যায় হয়েছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’ আর শোভারানি বলছেন, ‘‘ছেলের কোন‌ও ক্ষতি যেন না হয়। তবে আমি আর ওর কাছে থাকব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন