Mahalaya Tarpana

আশঙ্কা সত্যি করে সুরক্ষার আগল ভাঙল তর্পণের ভিড়

অভিযোগ, ভিড় সত্ত্বেও কোনও ঘাটেই পুলিশকে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিতে দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৫
Share:

বেলাগাম: তর্পণ করতে গিয়ে শিকেয় উঠল করোনা-সুরক্ষা। নেই মাস্ক, মানা হয়নি দূরত্ব-বিধিও। বৃহস্পতিবার, বাবুঘাটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মহালয়ার তর্পণেই এমন বেলাগাম ভিড় হলে দুর্গাপুজোয় কী হবে?

Advertisement

করোনা পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শহরের ঘাটে ঘাটে মাস্কহীন ভিড়ের চিত্র দেখে বড় হয়ে উঠেছে এই প্রশ্নই। যা আরও জোরালো হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের ‘ঢিলেঢালা’ ভাব দেখে। অভিযোগ, ভিড় সত্ত্বেও কোনও ঘাটেই পুলিশকে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিতে দেখা যায়নি। উদাসীন ছিলেন পুরসভার আধিকারিকেরাও। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে মহালয়ার তর্পণ নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি চায়নি কোনও পক্ষ। অনুরোধের মাধ্যমে বিধি মানানোর প্রক্রিয়া কার্যকর করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু তাঁদেরই প্রশ্ন, ‘‘পুরীর রথযাত্রার মতো দুর্গাপুজোর অনুমতির ব্যাপার আদালত পর্যন্ত গড়ালে এই ভিড়ের ছবি সমস্যায় ফেলবে না তো?’’

পুরসভা জানিয়েছিল, পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে শহরের ন’টি ঘাটে তর্পণের সময়ে দূরত্ব-বিধি নিশ্চিত করতে বার বার ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এ দিন বেলার দিকে শুধু বাবুঘাটে বান আসার ঘোষণা ছাড়া বাকি ঘাটগুলিতে কোনও ঘোষণাই ছিল না। নিরাপত্তা বলতে, কয়েকটি ঘাটে জলের মধ্যে কয়েক ধাপ নেমে জাল পাতার ব্যবস্থা! এ-ও জানানো হয়েছিল, প্রতি ঘাটে পুলিশের তরফে শিবির তৈরি করে বিনামূল্যে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হবে। কিন্তু কোথাও তেমন শিবির চোখে পড়েনি। নিমতলা ঘাটে কর্তব্যরত উত্তর বন্দর থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘আমাদের নিজেদেরই স্যানিটাইজ়ার জোগাড় করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে, তার উপরে আবার দান!’’ বিনামূল্যে স্যানিটাইজ়ার পাওয়ার ব্যাপারে এক তর্পণকারীর আবার মন্তব্য, ‘‘ও সব কিছু লাগবে না। গঙ্গার জলেই করোনা ধুয়ে যাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: হেনস্থার ঘটনায় গোপন জবানবন্দি দেবেন মিমি

বাবুঘাটে দেখা গেল, এক পুরোহিতকে ঘিরে প্রায় ৪০ জনের ভিড়। কারও মুখে মাস্ক নেই। পুরোহিত মাঝেমধ্যে ঘোষণা করছেন, ‘‘এক বারে ৪০ জনকে মন্ত্র বলব। কাছাকাছি দাঁড়ান। তার পরে আবার ৪০ জন।’’ কিন্তু দূরত্ব-বিধির কী হবে? ঘাটের সিঁড়িতে রাখা ব্যাগ থেকে মাস্ক বার করে পরে পুরোহিত বললেন, ‘‘করোনা নিয়ে ভাবলে পুজো করাব কী করে?’’ জাজেস ঘাটে তর্পণের জন্য এলেও জ্বরের জন্য গঙ্গায় নামতে চাননি এক জন। মন্ত্র বলা শেষে তাঁকে পুরোহিতের প্রশ্ন, ‘‘কী ভাই, করোনা নয় তো?’’ অথচ প্রশ্নকর্তা বা উত্তরদাতা, মাস্ক নেই কারও মুখে। প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তির সহাস্য মন্তব্য, ‘‘মাস্ক পরে নিন ঠাকুরমশাই।’’ প্রায় একই চিত্র দেখা গিয়েছে হাওড়ার তেলকল ঘাটে। পুরোহিতমশাই মাস্ক পরে তর্পণ করালেও যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের কারও মাস্কের বালাই নেই!

ভোরের আলো ফোটার আগেই বাগবাজার ঘাটে চারটি লরিতে হাজির প্রায় শ’তিনেক লোক। কেউই মাস্ক পরেননি। মাস্ক ছাড়া এত ভিড়, পুলিশ কিছু বলবে না? কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘আমাদের শুধু চোর আর ইভটিজ়ার ধরতে বলা হয়েছে।’’

এমন অবস্থা কেন? ঘাটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার শুধু বলেন, ‘‘পুজোর আগে এই ভিড় চিন্তা বাড়িয়ে দিল।’’ ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশের এমন গা-ছাড়া ভাব কেন? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন,‘‘ব্যাপারটা শুনলাম। যা বলার, বন্দরের ডিসি বলবেন।’’ ডিসি (বন্দর)-কে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

মায়ের জন্য এ দিন তর্পণ করতে এসেছিলেন এক যুবক। তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। ওই যুবক বললেন, ‘‘গত মার্চে মা মারা গিয়েছেন। দুর্গাপুজো নিয়ে আমাদের উৎসাহ নেই। কিন্তু যাঁদের আছে, তাঁরা এ দিন নিয়ম মানলেন না কেন?’’ ঘটনাচক্রে, ওই যুবকের মুখেও মাস্ক ছিল না। কেন এই উদাসীনতা?

পুলিশ-প্রশাসনের মতো তাঁর কাছেও এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন