Child Birth

ভেন্টিলেশনে সংক্রমিত প্রসূতি, সিজ়ারিয়ানে প্রসব সন্তান

শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এতটাই কমে গিয়েছিল যে, ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল কোভিডে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ০৫:৪৬
Share:

প্রতীকী চিত্র

শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এতটাই কমে গিয়েছিল যে, ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল কোভিডে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাকে। গর্ভস্থ শিশুটিকে সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব করানো হলে ওই রোগিণীর অবস্থার উন্নতি হতে পারে, এমনটা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা। সোমবার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মধ্যেই অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে সেই অস্ত্রোপচার করল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

গত ১২ জুন ওই হাসপাতালে ভর্তি হন বনগাঁর রাখি মণ্ডল বিশ্বাস। ৩২ বছরের ওই বধূ ৩৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভর্তির পর থেকেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় তাঁকে বাইপ্যাপ দিয়ে রাখতে হয়েছিল। শ্বাসের গতিও থাকছিল ৪০-৪৫। সঙ্গে চলছিল করোনার বিভিন্ন কড়া ডোজ়ের ওষুধ। হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অসীম কুণ্ডু জানান, প্রথম থেকেই তাঁরা চিন্তাভাবনা করছিলেন যে, রাখিকে আরও উন্নত চিকিৎসা দিতে হলে সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের ব্যবস্থা করাটা জরুরি। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরে ১৭ জুন, বৃহস্পতিবার স্ত্রীরোগ, নবজাতক, অ্যানাস্থেশিয়া-সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।

অসীমবাবু বলেন, ‘‘আলোচনার পরে গত ১৯ জুন, শনিবার সিদ্ধান্ত হয় যে, ওই রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার থেকে স্ত্রীরোগ বিভাগে নিয়ে গিয়ে সিজ়ার করে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই মতো সোমবার প্রক্রিয়াটি করার সিদ্ধান্ত হয়।’’ কিন্তু ২০ জুন, রবিবার ভোর থেকেই রাখির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৬০-৬২ শতাংশে নেমে যাওয়ার তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোভিড নিউমোনিয়ার কারণে মহিলার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা ছাড়া, গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির কারণে শ্বাসের মৃদু সমস্যা এমনিতেই থাকে। জরায়ু বড় হয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকার ফলে ডায়াফ্রামের (ফুসফুসের নীচের পেশি) উপরে চাপ পড়ে শ্বাসের সমস্যা হয়। এমন অবস্থায় মেডিক্যাল বোর্ড সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে গর্ভস্থ সন্তানকে বার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

Advertisement

সেই মতো এ দিন সকালে স্ত্রী-রোগ বিভাগ থেকে সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হয় সিসিইউ-তে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের চিকিৎসক পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক, শবনম বানু, সুমনা পাল, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের অসীমবাবু, দেবাশিস ঘোষ, ঋতুপর্ণা বক্সী, এণাক্ষী সাহা, শান্তা গঙ্গোপাধ্যায় এবং নিওনেটাল (নবজাতক)-সহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকেরা সকাল ৯টায় হাজির হয়ে যান সিসিইউ-র অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটারে। সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে সেখানেই কন্যার জন্ম দেন রাখি। সদ্যোজাতকে ‘নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু)-এ রাখা হয়েছে।

চিকিৎসক পূজা বলছেন, ‘‘এই সিজ়ারে বড় রকমের ঝুঁকি ছিল। এক দিকে রোগী ভেন্টিলেশনে, তার উপরে করোনার কারণে যে ওষুধ তিনি খাচ্ছেন, তার জন্য রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ায় বেশি রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সব দিক বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, এখনও প্রোনিং পদ্ধতিতে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন রাখি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন