প্রতীকী ছবি।
দমদমের এক রেস্তোরাঁ চোখ খুলে দিয়েছিল। সেখানে এক জনের প্লেটে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবারই পরিবেশন করা হত অন্য জনকে। যা দেখে হতবাক হয়ে যান সেখানে অভিযানে যাওয়া পুলিশ ও পুরসভার অফিসারেরা। দমদমের ওই ঘটনার পরেই প্রশ্ন ওঠে, কলকাতার নামী-দামি রেস্তোরাঁগুলির খাবারের মান কি খুব ভাল? পরিষেবা কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত? হেঁশেলের পরিবেশই বা কেমন? এ সব প্রশ্নের উত্তর জানতে বুধবার পার্ক সার্কাসের একাধিক রেস্তোরাঁয় আচমকাই হানা দিয়েছিল কলকাতা পুরসভার ভেজাল-বিরোধী ইনস্পেক্টরদের একটি দল। কিন্তু যে দৃশ্য তাঁরা দেখেছেন, তা রেস্তোরাঁর ‘সুনামের’ সঙ্গে আদৌ খাপ খায় না বলেই মনে করছেন পুর অফিসারেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, হেঁশেল পরিষ্কার নয়। যে সব রেফ্রিজারেটরে খাবার রাখা হয়, সেগুলির অবস্থাও ভাল নয়। এতে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অবিলম্বে ওই সব ফ্রিজ বদলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুরসভার ভেজাল দফতরের পদস্থ আধিকারিক বিভাকর ভট্টাচার্য।
কলকাতায় কয়েক হাজার ছোট-বড় রেস্তোরাঁ রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন সে সব রেস্তোরাঁ থেকে খাবার খাচ্ছেন। তার মান যাচাইয়ের দায়িত্ব পুর প্রশাসনের। এ জন্য কলকাতা পুরসভায় ভেজাল প্রতিরোধ বাহিনীও রয়েছে। দমদমের ঘটনার পরেই শহরের নামী রেস্তোরাঁয় খাবারের মান খতিয়ে দেখতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। এ দিন পুরসভার দল পার্ক সার্কাস মোড়ের দু’টি মোগলাই রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিল।
বিভাকরবাবু জানান, একটি রেস্তোরাঁর হেঁশেলে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি বেশ অপরিষ্কার। যে সব ফ্রিজে খাবার রাখা ছিল, সেগুলিও ঠিক মতো কাজ করে না। ম্যানেজারের নজরে তা আনা হয়। তিনি তা মেনেও নেন। বলেন, সে সব বদলে ফেলবেন। এরই মধ্যে ভেজাল বিশেষজ্ঞেরা ওই রেস্তোরাঁর তৈরি কয়েকটি খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার নমুনাও তুলে নেন পরীক্ষার জন্য।
এর পরে পাশেই আর এক নামী রেস্তোরাঁয় ঢোকে পুরসভার দল। সেখানেও হেঁশেলের পরিবেশ দেখে অসন্তুষ্ট হন পুর অফিসারেরা। তাঁদের কথায়, ওই সব দোকানের বিক্রি বেশ ভাল। সুনামও দেশ জুড়ে। তার পরেও হেঁশেলের হাল দেখে হতাশ তাঁরা। ফ্রিজের হালও ভাল নয়। দোকানের কর্মীদের তাঁরা নির্দেশ দেন, এ সব বদলাতে হবে। ওই দোকানের তৈরি চিকেন বিরিয়ানির মান যাচাই করতে নমুনা সংগ্রহ করেন ইনস্পেক্টরেরা।
এ বিষয়ে ওই রেস্তোরাঁর এক কর্তা জানান, পুরসভার অফিসারেরা তাঁদের ওখানে কখন গিয়েছিলেন, কী বলেছেন, তা নিয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান অন্য রেস্তোরাঁর ম্যানেজারও।
বিভাকরবাবু জানান, ওই সব নমুনা পরীক্ষা করা হবে পুরসভার ল্যাবরেটরিতে। দিন দশেকের মধ্যে তার রিপোর্টও পাওয়া যাবে। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কিছু মিললে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন, অনেক ছোট ছোট রেস্তোরাঁয় নিম্ন মানের খাবার বিক্রি হয় বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। তা হলে প্রথমেই বড় রেস্তোরাঁর দিকে চোখ পড়ল কেন?
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ছোটখাটো রেস্তোরাঁয় আগেও অভিযান চালানো হয়েছে। যে হেতু বড় প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষ যান, তাই সেখানেও অভিযান চালানো হচ্ছে। আরও কয়েকটিতে অভিযান হবে। কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় এ বার থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে জানান ওই পুরকর্তা।