‘ছাত্র’ মন দিলেও প্রথম স্থানে ওঠা নিয়ে সংশয়ই

আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বহর বেশি হওয়া নিয়ে কলকাতা মেট্রোর বিরুদ্ধে রেল বোর্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরিচালন ব্যবস্থার ঢিলেঢালা অবস্থা নিয়ে ঘুরেফিরে রেলকর্তাদের বক্রোক্তি সহ্য করাও প্রায় নিয়মে পরিণত হতে বসেছিল।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০১
Share:

ফাইল চিত্র।

আলস্য ঝেড়ে ফেলে আগের তুলনায় পড়াশোনায় মনোযোগ অনেকটাই বেড়েছে ছাত্রের। কিন্তু অভিভাবকের সুনজরে না পড়ায় পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা যেন আর বাড়ছেই না। পড়াশোনায় মনোযোগ ফেরা ছাত্রের মতো খেটেও তাই সামনের সারিতে উঠে আসা নিয়ে সংশয় যাচ্ছে না কলকাতা মেট্রোর কর্তাদের।

Advertisement

আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বহর বেশি হওয়া নিয়ে কলকাতা মেট্রোর বিরুদ্ধে রেল বোর্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরিচালন ব্যবস্থার ঢিলেঢালা অবস্থা নিয়ে ঘুরেফিরে রেলকর্তাদের বক্রোক্তি সহ্য করাও প্রায় নিয়মে পরিণত হতে বসেছিল। কিন্তু, গত দু’বছরে সেই ঢিলেমি অনেকটাই কাটিয়ে অন্যান্য খাতে উল্লেখযোগ্য হারে আয় বাড়িয়েছে কলকাতার জীবনরেখা। ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে রেল বোর্ডের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলার পাশাপাশি চলতি বছরেও তার উন্নতির রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী।

চলতি আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে যাত্রী পরিবহণ ব্যতিরেকে অন্য খাতে কলকাতা মেট্রোর আয় হয়েছে ১৯.৫৫ কোটি টাকা। গত বছর ওই একই সময়ে মেট্রোর আয় ছিল ১২.৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরে সেই অঙ্ক বেড়েছে কম-বেশি প্রায় ৫৪ শতাংশ। দেশ জোড়া মন্দার পরিস্থিতির মধ্যেও বিজ্ঞাপন খাতে মেট্রোর আয় হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত বছর ওই খাতে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে মেট্রোর আয় যেখানে ছিল ৭.৯ কোটি টাকা, সেখানে চলতি আর্থিক বছরে তা ইতিমধ্যেই ১৬.৪৪ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। আগামী কয়েক মাসে আয় আরও বাড়বে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হলে আয়ের ক্ষেত্র আরও অনেকটা বাড়বে বলেও মনে করছেন মেট্রোকর্তারা।

Advertisement

কী ভাবে বাড়ছে মেট্রোর আয়?

মেট্রো সূত্রের খবর, বিভিন্ন স্টেশনে পড়ে থাকা জায়গা ছাড়াও সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রকে ব্যবহার করার দিকে আগের তুলনায় তৎপরতা অনেকটা বেড়েছে। যা আনছে কাঙ্খিত সাফল্য। একই সঙ্গে দিল্লি, বেঙ্গালুরু-সহ বিভিন্ন শহরের মেট্রোর অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে।

গত কয়েক বছরে মেট্রোর যাত্রাপথ সে ভাবে বাড়েনি। ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও নাকচ হয়েছে। কিন্তু মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আপাতত দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে সেটিকেই সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিলোমিটার পিছু যাত্রী-সংখ্যার নিরিখে দিল্লি মেট্রোর চেয়েও এখন এগিয়ে কলকাতা।

তবে, আয় বাড়লেও পরিষেবার হাল ফেরা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে যাত্রীদের একটা বড় অংশের। ‘দমদম ইস্টার্ন অ্যান্ড মেট্রো রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুজিতকুমার সাধ্য বলেন,‘‘মেট্রোয় ভিড়ের তুলনায় পরিকাঠামো অপ্রতুল। ট্রেনের সংখ্যা এবং সময়ানুবর্তিতা উন্নত না হওয়ায় যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে।’’ এক নিত্যযাত্রী শৈলেন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘যাত্রী বাড়লেও ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের ব্যবধান পাঁচ মিনিটের কমে আনতে পারেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এর পরে বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর থেকে ট্রেন চালু হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।’’

পরিষেবা নির্বিঘ্ন রাখতে না পারলে যে আয়ের ভাঁড়ার ভরবে না, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষও। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঠেকাতে কিছু কাজ শুরু হলেও অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল বসানোর প্রস্তাব রেল বোর্ডের অনুমোদন পায়নি। সিগন্যালিং ব্যবস্থা বদলের কাজ কবে শুরু হবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। প্রায় দু’বছর অপেক্ষার পরে সম্প্রতি পুরনো এসক্যালেটর বদল শুরু হয়েছে। ফলে আয় বাড়লেও রেল বোর্ডে নম্বর বাড়া নিয়ে রয়েই গিয়েছে চিন্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন